প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট পর্ব শেষ হতেই ফের সেঞ্চুরি পেট্রলের দরে। আড়াই মাস পরে আবার সেই রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর এবং মধ্যপ্রদেশের অনুপ্পুরে। ভোট চলাকালীন চার দিন দাম একটু কমেছিল। যদিও একাংশের দাবি, এমন যে হতে পারে সেই আশঙ্কা আর অস্বস্তি ছিলই। কারণ ভোটের সময় তেলের দাম কমে যাওয়া এবং ভোট ফুরোলে ফের বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে দেশবাসীর। সেই তেতো অভিজ্ঞতাই আরও পোক্ত করে মঙ্গল থেকে শুক্রবার লাগাতার বেড়েছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। যার জেরে গোটা দেশের উদ্বেগ বাড়িয়ে এ দিন শ্রী গঙ্গানগরে লিটারে পেট্রল দাঁড়িয়েছে ১০২.১৫ টাকা। অনুপ্পুরে ১০১.৮৬ টাকা। মুম্বইতে দর ছিল ৯৭.৬১ টাকা। তবে শনিবারের দাম একই রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি।
মোদী সরকারের উদ্দেশে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির তোপ, ‘‘অপরাধী। মানুষের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে দিচ্ছে। কত মানুষ শ্বাস নিতে না-পেরে মারা যাচ্ছেন, হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছেন না, তাঁদের জন্য কোনও চিন্তা নেই। এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য আমাদের দেশ এবং মানুষকে লুঠ করা।’’
কলকাতায় পেট্রল এখনও নতুন রেকর্ড না-গড়লেও, তার থেকে বেশি দূরে নেই। এখন লিটার পিছু ৯১.৪১ টাকা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ছিল ৯১.৭৮ টাকা। তবে ডিজেল নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলেছে শুক্রবারই। আইওসি-র পাম্পে তা বিকিয়েছে ৮৪.৫৭ টাকায়।
করোনা সংক্রমণের মতোই এখন ঊর্ধ্বমুখী দুই জ্বালানির দর। দু’ক্ষেত্রেই সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে সারা দেশ। সরকারি মহল এ দিন রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে রাজ্যের কর (ভ্যাট) সব থেকে বেশি হওয়ার কথা মনে করিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, করোনা সঙ্কটের মধ্যে গত বছর তেলে শুল্ক বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। ভ্যাট একই থাকলেও, তার জেরে সেই খাতে আয় বাড়ে রাজ্যগুলির। কারণ, তেলের দরে কেন্দ্রীয় শুল্ক চাপার পরে ভ্যাট বসে। একাংশের প্রশ্ন, কেন শুল্ক কমানো নিয়ে কেন্দ্র উচ্চবাচ্য করছে না? তারা কমালে রাজ্যগুলিকে চাপ দেওয়া যাবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন দু’পক্ষের
কাছেই কর হ্রাসের আর্জি জানিয়েছে।
তেল সংস্থাগুলি গত বছর থেকেই লাগাতার দাম বাড়ানোয় এ বছরের গোড়ায় দেশের প্রায় সর্বত্রই রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল পেট্রল-ডিজেলের দর। গোড়ায় দামি (ব্র্যান্ডেড) পেট্রল লিটারে ১০০ টাকা ছাড়ায়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শ্রী গঙ্গানগরে তা বিক্রি হয় ১০০.১৩ টাকায়। এরপর অনুপ্পুর-সহ কিছু জায়গায় সেঞ্চুরি হাঁকায় পেট্রল। পাল্লা দিয়ে তেলের দরের এই দৌড়ে নাজেহাল পরিবহণ-সহ সব ক্ষেত্র। এ দিন ইয়েচুরিও বলেছেন, এতে পরিবহণ খরচ বাড়ছে। যা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলায় আনাজ, খাদ্যপণ্য-সহ সব অপরিহার্য জিনিস দামি হবে। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন আরও দুঃসহ হবে। তেলের খরচ বাড়ায় বহু ক্ষেত্রে গণ-পরিবহণে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া চাওয়ার অভিযোগও উঠছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি প্রসেনজিৎ সেনের দাবি, দামের জন্য তেল বিক্রিতেও টান পড়ছে। একে সংক্রমণের জেরে তার চাহিদা কমেছে। তার উপর অনেকেই খরচের ভয় গাড়ি বার করছেন না।
কেন্দ্র অবশ্য দাম বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দরকেই দায়ী করে। যা হালে একটু কমেছে।