Coronavirus Lockdown

ফারাক কমেনি বেকারত্বে, চোখ লকডাউন তোলায় 

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, পর পর দু’মাস কার্যত দেশে প্রতি চার জনের এক জন কর্মহীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৪:১১
Share:

প্রতীকী ছবি

প্রায় একই।

Advertisement

এপ্রিলে দেশে বেকারত্বের হার (২৩.৫২%) যেমন ছিল, মে মাসেও তা প্রায় একই (২৩.৪৮%)। সোমবার উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র প্রকাশিত পরিসংখ্যানে তা কমেছে মাত্র ০.০৪ শতাংশ বিন্দু। এই দুই মাসে ফারাক নামমাত্র গ্রাম এবং শহরের বেকারত্বের হারেও। এপ্রিলের তুলনায় গত মাসে গ্রামে তা সামান্য কমেছে, শহরে বেড়েছে অল্প (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)।

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, পর পর দু’মাস কার্যত দেশে প্রতি চার জনের এক জন কর্মহীন। রাজ্যওয়াড়ি তথ্যে কিছু সংখ্যা আরও চমকে ওঠার মতো। যেমন মে-তে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি ঝাড়খণ্ডে (৫৯.২%)। অর্থাৎ, হাতে কাজ নেই প্রায় ৬০ শতাংশের! ওই হার চড়া বিহার (৪৬.২%), দিল্লি (৪৪.৯%), হরিয়ানা (৩৫.৭%), পুদুচেরি (৫৮.২%), পঞ্জাব (৩৩.৬%), তেলঙ্গানা (৩৪.৮%)-সহ বিভিন্ন রাজ্যে। বরং সেই তুলনায় তা কিছুটা কম পশ্চিমবঙ্গ (১৭.৪%), গুজরাত (১৩.৬%), অসম (৯.৬%), উত্তরাখণ্ডের (৮%) মতো রাজ্যে। অর্থাৎ, গোটা দেশের গড় বেকারত্বের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার কিছুটা হলেও কম।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, এপ্রিলের তুলনায় মে-র শেষ দিকে লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তাতে কল-কারখানার ঝাঁপ ওঠেনি সে ভাবে। প্রথমত, বহু শিল্পাঞ্চল, শিল্প তালুক বড় শহর কিংবা তার লাগোয়া অঞ্চলে হওয়ায় মে পর্যন্ত পুরোদস্তুর ছিল নিষেধাজ্ঞার বেড়িতে বন্দি। তাই উৎপাদনের চাকা সে ভাবে সেখানে ঘোরেনি। তার উপরে অঞ্চল ভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা ওঠায় কল-কারখানা চালানোয় যে তেমন সুবিধা হচ্ছে না, তা গোড়াতেই বলেছিল শিল্প। কারণ, কোনও পণ্যের জোগান-শৃঙ্খল সুদূর বিস্তৃত। যে সমস্ত জায়গা থেকে তার কাঁচামাল আসে কিংবা যেখান থেকে কাজে আসেন তার শ্রমিকেরা, সেই সব জায়গা আটকে থাকলে তেমন লাভ নেই কারখানা খোলার অনুমতি পেয়েও।

আরও পড়ুন: ভবিষ্যতে বর্ষা, অর্থনীতিই ঠিক করবে বাজারের গতি

তার উপরে রয়েছে এক রাশ অনিশ্চয়তা। টালমাটাল এই অর্থনীতিতে চাহিদা কেমন, অনেক সংস্থারই তা ঠিক করে জানা নেই। করোনার থাবা এড়িয়ে টানা কত দিন কারখানা কিংবা পরিষেবা কেন্দ্র চালু রাখা যাবে, তা-ও অজানা। যেমন, গত মাসে কারখানার ঝাঁপ তুলেও কর্মীদের মধ্যে করোনা-সংক্রমণের কারণে তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে একাধিক সংস্থা। তাই এই বিপুল অনিশ্চয়তার মধ্যে শুরু থেকেই পুরোদমে উৎপাদনের পথে হাঁটবে খুব কম সংস্থাই। বরং বাজারের মর্জি এবং লকডাউন-উত্তর পরিস্থিতি বুঝে ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়াতে চাইবে তারা। কাজের সুযোগও তৈরি হবে সেই অনুযায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত এই সমস্ত কারণেই মে মাসে এক লাফে বেকারত্ব কমার কথা ছিল না। তা হয়ওনি। যে দেশে প্রায় ৯০% কর্মী অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত, দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে লকডাউনের দুই মাসে চড়া বেকারত্বের হেরফেরও তাই স্বাভাবিক ভাবেই কম।

তারই মধ্যে সামান্য আশার আলো সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানে। ২৪ মে শেষ হওয়া সপ্তাহের (২৪.৩৪%) তুলনায় ৩১ মে শেষ হওয়া সপ্তাহে বেশ খানিকটা কমেছে বেকারত্বের হার (২০.১৯%)। কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে, ৭ শতাংশ বিন্দুরও বেশি তা কমেছে গ্রামে। শহরে উল্টে বেড়েছে ২ শতাংশ বিন্দুরও বেশি। অর্থাৎ, শহরে শিল্প-পরিষেবা মে-র শেষ সপ্তাহেও প্রত্যাশিত গতিতে চালু হয়নি। অন্তত সেখানে কর্মীর চাহিদা নেই। আর গ্রামে এক লাফে বেকারত্ব এতখানি কমা, ব্যতিক্রম কি না, তা স্পষ্ট হবে আগামী দিনে। কারণ, এর আগেও লকডাউনের মধ্যে গ্রামে ওই হার বেশ খানিকটা কমে ফের মাথা তুলেছিল পরের সপ্তাহেই।

লকডাউন ওঠার পরে জুনে এই বেকারত্বের হার কতখানি কমে, সে দিকে নজর থাকবে সকলের। আবার শিল্পের চিন্তা, পরিযায়ী কর্মীদের এক বড় অংশ বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে শ্রমিকের ঘাটতি হবে কি না। ছোট-মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নীতিন গডকড়ীর অবশ্য এ দিন আশ্বাস, ‘‘অনেক শিল্পেই পরিযায়ী শ্রমিক মোট কর্মীর ১০-২০ শতাংশ। সকলেই যে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা, এমন নয়।… তবু প্রয়োজনে ওই কর্মীদের ফেরানোর জন্য যেখানে কারখানা, তার জেলাশাসক কথা বলতে পারেন শ্রমিকদের বাড়ির জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে। কথা বলে বন্দোবস্ত করা যেতে পারে কর্মী ফেরানোর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement