ফাইল চিত্র।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের বাড়তি ভাগ নেওয়ার পরে এ বার কেন্দ্রের নজর শীর্ষ ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারের দিকে। বুধবার সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর দাবি, এই ভান্ডার থেকে অর্থ নিয়ে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার করা উচিত। বিশেষত সড়ক উন্নয়নে তা কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য নীতি তৈরি করা প্রয়োজন। এই কথা সামনে আসার পরেই তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, অর্থনীতির বিভিন্ন ওঠাপড়া সামলাতে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার ব্যবহার হয়। ফলে তাকে অন্য কাজে লাগানোর আগে ভেবে দেখা উচিত।
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড় করাতে করোনার মধ্যেও পরিকাঠামোয় ১০২ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির লক্ষ্য থেকে সরেনি মোদী সরকার। তাদের দাবি, এতে কাজ তৈরি হবে, চাহিদা বাড়বে। কিন্তু তার জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ৩০ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার দাঁড়িয়েছে ৬২,০৬০ কোটি ডলার। সম্প্রতি এক সংসদীয় কমিটিও এই ভান্ডারকে সড়ক পরিকাঠামোর কাজে লাগানোর পক্ষে সওয়াল করেছে।
এ দিন বণিকসভা সিআইআইয়ের বার্ষিক সভায় গডকড়ী বলেন, তাঁর লক্ষ্য দেশে দিনে ১০০ কিমি হাইওয়ে তৈরি করা। কিন্তু বিদ্যুতে পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন বা রেলের ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশন থাকলেও, অর্থের সংস্থান করতে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সড়ক তৈরির টাকা জোগাড়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা হলেও, তাদের উত্তরে তিনি খুশি নন। এই পরিস্থিতিতে কম খরচে মূলধনের ব্যবস্থা করতে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডারকে কাজে লাগাতে তিনি শীর্ষ ব্যাঙ্ক গভর্নরের সঙ্গে আলোচনার কথা ভাবছেন বলে জানান মন্ত্রী।
বিশেষজ্ঞদের যদিও মত, বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার দিয়ে বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আরবিআই-কে। যেমন, আমদানি খরচ মেটানো, যার বড় অংশ যায় অশোধিত তেল কিনতে। রয়েছে বৈদেশিক ঋণ শোধ এবং টাকার দামে দোলাচল সামাল দিতে প্রয়োজনে ডলার বিক্রির মতো কাজ। তা ছাড়া অতিমারির পরিস্থিতিতে যে ভান্ডার বিপুল বেড়েছে, তা আগামী দিনে না-ও থাকতে পারে। ফলে এ ধরনের সিদ্ধান্তের আগে সব কিছুই খতিয়ে দেখা দরকার। এ প্রসঙ্গে তাঁরা মনে করাচ্ছেন ১৯৯১ সালে সোনা বেচে সরকারের বিদেশি মুদ্রা জোগাড়ের কথা। যা দিয়ে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি সামালাতে হয় কেন্দ্রকে।
ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারেরও বক্তব্য, করোনার ফলে দেশে উৎপাদন শিল্প ঝিমিয়ে থাকায় আমদানি খরচ কমেছে। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার বৃদ্ধি পাওয়ার যা অন্যতম কারণ। তার উপরে হালে রফতানি বাড়াতেও এই ভান্ডার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু আগামী দিনে শিল্পোৎপাদনে গতি এলে আমদানি খরচ বাড়বে। অথবা কোনও কারণে রফতানি ঝিমিয়ে পড়লে ভান্ডার কমতে সময় লাগবে না। তাই এই অর্থ পরিকাঠামো বা অন্য কাজে ব্যবহারের আগে হাজারবার ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন তিনি।