প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ। ফাইল চিত্র।
কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল তখনই। অর্থ মন্ত্রক থেকে ‘জোর করে বদলির’ জন্য শেষমেশ নিজের কলমেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার স্বপ্ন ফেরি করে ক্ষমতায় ফিরলেও, সাহসী সংস্কারের রাস্তা ছেড়ে ক্রমশ জনমোহিনী নীতির দিকে ঝুঁকছে মোদী সরকার।
প্রয়াত অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথমে আর্থিক বিষয়ক ও পরে অর্থসচিবের দায়িত্ব সামলেছেন গর্গ। কিন্তু ব্লগে লিখেছেন, নির্মলা অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই বনিবনা হয়নি তাঁদের। গর্গের কথায়, “জানি না কেন …আমার প্রতি আস্থা ছিল না নির্মলার। আমার সঙ্গে কাজ করতেও স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূলধন-কাঠামো থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে মতের অমিল ছিল বিস্তর। খুব দ্রুত ব্যক্তিগত সম্পর্ক তো তেতো হয়েইছিল, ফলপ্রসূ হচ্ছিল না কেজো সম্পর্কও।”
গর্গের দাবি, অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নাকি ২০১৯-এর জুনে তাঁর বদলির জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন নির্মলা। শেষমেশ নির্মলা দায়িত্বে আসার ৩৫ দিনের মধ্যে (৫ জুলাই) বাজেট উতরে দেওয়ার পরে ২৪ জুলাই তাঁকে বদলি করা হয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকে। অথচ ৩১ অক্টোবর নিজেই স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানানোর কথা ভেবে রেখেছিলেন গর্গ। কিন্তু বদলির সিদ্ধান্ত জানার পরে সে দিনই ওই আবেদন জানান তিনি। আগে যদিও তাঁর দাবি ছিল, ওই বদলির সঙ্গে স্বেচ্ছাবসরের সম্পর্ক নেই।
যদিও ১৯৮৩ সালের ব্যাচের এই আইএএস অফিসার ঢালাও প্রশংসা করেছেন জেটলির। বলেছেন তাঁর উদার মন, অর্থনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, নীতি নির্ধারণে দক্ষতা এবং আমলাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়ার কথা। সেখানে বর্তমান অর্থমন্ত্রী সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ, “…নির্মলার ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানের সম্ভার, দক্ষতা, নীতি নির্ধারণের কৌশল এবং অফিসারদের প্রতি ব্যবহার অনেকটাই আলাদা।” কেন্দ্রের জনমোহিনী নীতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গর্গ। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এ ভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠা সম্ভব কি না।
অনেকে বলেন, সচিব থাকাকালীন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবির মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মন্ত্রকের সম্পর্ক তেতো করে ফেলেছিলেন গর্গ। কিন্তু এখন অর্থনীতির এই নড়বড়ে সময়ে তাঁর এই অভিযোগ নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দেবে বিরোধীদের হাতে।