প্রতীকী ছবি।
চাহিদার অভাবে প্রায় সব ধরনের গাড়ি বিক্রি চোট খাওয়ার পরে ত্রাণের জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে দরবার করছিল শিল্প। অবশেষে শুক্রবার সেই লক্ষ্যেই হাঁটলেন নির্মলা। গাড়ি বিক্রি বাড়াতে ঘোষণা করলেন একগুচ্ছ সুবিধা। শুধু তাই নয়, ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির (এনবিএফসি) কাছ থেকে বাড়ি ও ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি গাড়ি সংস্থাগুলির ঋণ পাওয়াও নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। পদক্ষেপ করেছেন সেই তহবিল কম খরচে জোগাড়ের পথ তৈরি করে দিতেও। বিরোধীদের একাংশের অবশ্য দাবি, এ ছাড়া আরও কোনও পথ খোলা ছিল না কেন্দ্রের সামনে।
নির্মলার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে গাড়ি তৈরির সংস্থা ও ডিলার, দু’পক্ষই। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গাড়ি শিল্পের এখন যা অবস্থা, তাতে এই সব কিছুর সঙ্গে জিএসটির হার কমানোও জরুরি। নির্মলার দাবি, এই কাজ জিএসটি পরিষদের এক্তিয়ারভুক্ত। তাই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না তিনি।
এ দিন নির্মলার ঘোষণাগুলির মধ্যে আছে, বিক্রি বাড়াতে সরকারি দফতরের গাড়ি কেনার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা, ২০২০-এর মার্চ পর্যন্ত কেনা বিএস-৪ মাপকাঠির গাড়িগুলি যত দিন রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ তত দিনই বৈধ থাকার সুবিধা, গাড়ির এককালীন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। নতুন গাড়ির চাহিদা বাড়াতে কেন্দ্র দ্রুত গাড়ি বাতিলের খসড়া নীতি আনবে বলেও জানান তিনি।
বস্তুত, প্রায় এক বছর ধরে নাগাড়ে কমছে সব ধরনের গাড়ি বিক্রি। বিক্রি তলানিতে ঠেকায় ইতিমধ্যেই ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছে বহু ডিলার সংস্থা। গাড়ি উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেহাল দশা যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলিরও। গাড়ি, যন্ত্রাংশ ও ডিলার সংস্থা মিলিয়ে ইতিমধ্যেই চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ৩.৫ লক্ষ মানুষ। শিল্পের আশঙ্কা অবস্থা না শোধরালে ছাঁটাই আরও বাড়বে।
ঘোষণা
• প্রথাগত জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি চলবে একই সঙ্গে। ইতিমধ্যে তৈরি করা হবে রফতানির জন্য বৈদ্যুতিকের পরিকাঠামো।
• ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কেনা যাবে বিএস-৪ মাপকাঠির গাড়ি। যত দিন রেজিস্ট্রেশন থাকবে, তত দিন ব্যবহারও করা যাবে সেগুলি।
• এত দিন বছরে ১৫% করে দাম কমত (ডেপ্রিসিয়েশন) পুরনো গাড়ির। এখন থেকে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সমস্ত গাড়ি কেনা হবে, সেগুলির দাম কমবে ৩০% হারে।
• এককালীন রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পিছোল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
• নিষেধাজ্ঞা উঠছে সরকারি দফতরের নতুন গাড়ি কেনায়।
• গাড়ি বাতিলের নীতি তৈরিতে জোর।
শিল্পের বক্তব্য
• গাড়ি শিল্প নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপে খুশি গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন সিয়াম এবং ডিলারদের সংগঠন ফাডা।
• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে অবিলম্বে ৭০,০০০ কোটি টাকা মূলধন জোগানো এবং ঋণে সুদ কমানোর পথ প্রশস্ত করায় চাহিদা বাড়বে বলে তাদের আশা।
• গাড়ি বাতিল নীতির স্পষ্ট রূপরেখার দিকে তাকিয়ে সংস্থাগুলি।
• জিএসটির হার কমানো হয় কি না, নজর সে দিকেও।
গাড়ি সংস্থাগুলির সংগঠন সিয়ামের প্রেসিডেন্ট রাজন ওয়াধেরা বলেন, ‘‘আলোচনার দু’সপ্তাহের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী যে ভাবে সুবিধা এনেছেন, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে শিল্প।’’ তবে তাঁর বার্তা, এ বার জিএসটি পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তারা কর কমানোর ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করবেন। মারুতি-সুজুকির চেয়ারম্যান আর সি ভার্গব বা মহীন্দ্রার এমডি পবন গোয়েন্কার মতো অনেকেই বলছেন, এই ঘোষণায় প্রাণ পাবে শিল্প। তাঁদের দাবি, এ দিন নির্মলা যা যা পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন, তাতে লাভবান হবে অর্থনীতি। তার হাত ধরেও ঘুরে দাঁড়ানোর জোর পাবে গাড়ি সংস্থাগুলি। তবে একাংশের মতে, কেন্দ্রের সঙ্গে এ বার পথকর বা রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর মতো সুবিধা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে রাজ্যগুলিকেও।
আর নির্মলা বলছেন, ‘‘বিএস-ফোর গাড়িগুলি বড় সমস্যা তৈরি করেছে। সরকার চেয়েছিল দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বৈদ্যুতিক ব্যাটারিকে (উৎপাদন) উৎসাহ দেওয়ার জন্য কিছু ঘোষণা করতে, তাই ধন্দ তৈরি হয়েছে...যে সমস্ত বিএস-ফোর গাড়ি ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, সেগুলি চলবে পুরো রেজিস্ট্রেশনের সময়টা ধরেই।’’