ছবি: পিটিআই
লাগাতার পড়ে তলানি ছোঁয়ার পরে ফের ঊর্ধ্বমুখী টাকার দাম। যে ডলার কিছু দিন আগে ৮০ পেরিয়েছিল, তা-ই মঙ্গলবার ৭৮.৫৩ টাকায় নেমে গিয়েছে। এক দিনে আমেরিকার মুদ্রার দাম পড়েছে ৫৩ পয়সা। এতটা ১১ মাসের মধ্যে এই প্রথম। তবু সংশ্লিষ্ট মহলে আশঙ্কা কাটছে না। প্রশ্ন উঠছে, টাকার এই উত্থান স্থায়ী হবে তো?
তবে এ দিনই সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করেছেন, ভারতীয় মুদ্রার দামের অস্বাভাবিক পতন হয়নি। বরং তা নিজের স্বাভাবিক পথ খুঁজে নিয়েই এগোচ্ছে। বরং বিদেশের বহু দেশের মুদ্রার তুলনায় ভারতের টাকার পতনের হার কম। তাই এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে ভারতে টাকার দামের পতন হওয়ার পরিবর্তে তার উত্থান হয়েছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক টাকার দ্রুত ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে ডলার বিক্রি করার পরেও ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে এখনও ৫০,০০০ কোটি ডলার মূল্যের বিদেশি মুদ্রা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি লাগাতার ভারতে শেয়ার বিক্রি করছিল বলেই মূলত টাকাকে টেনে নামিয়ে ডলার চড়ছিল। কারণ, তার চাহিদা বাড়ছিল। ভারতীয় মুদ্রাকে আরও দুর্বল হয়ে পড়া থেকে বাঁচাতে অনেক সময়েই হস্তক্ষেপ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যেই ওই বিদেশি লগ্নি ফের এ দেশে ফিরতে শুরু করেছে, অমনি টাকা গতিপথ বদলেছে। তাদের দাবি, বিদেশি লগ্নির উপরে মুদ্রার এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই সংশয় জিইয়ে রাখছে।
তবে রাজ্যসভায় নির্মলার দাবি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নিরবচ্ছিন্ন ভাবে টাকার দামের উপরে নজরদারি চালাচ্ছে ঠিকই। হস্তক্ষেপও করবে দামে অস্থিরতা দেখা দিলে। তবে তার দাম ঠিক করতে আরবিআই-কে খুব বেশি মাঠে নামতে হয়নি। তারা শুধু দামের অস্থিরতা এড়াতে সাহায্য করেছে, যাতে টাকা নিজের পথ খুঁজে নিতে পারে। আর সেটাই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘টাকার দাম কোথায় এসে দাঁড়বে, তা শীর্ষ ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করে না। শুধু এটাই নিশ্চত করতে চায় যে, টাকার দামের ওঠাপড়ার গতি যেন অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুত না হয়।’’
বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য মনে করছে, উদ্বেগ কমলেও সমস্যা মিটে গিয়েছে বলা যাবে না। আপাতত ডলারের দাম ৭৮.৫০ থেকে ৮০ টকার মধ্যে ঘোরাফেরা করবে।
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত বলেন, কিছু দিন আগে টাকা অস্বাভাবিক গতিতেই পড়ছিল। এখন হয়তো উঠছে। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধির হার কোন জায়গায় থাকে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। কারণ, সেই দিকে তাকিয়েই সুদের হার বৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিভিন্ন শীর্ষ ব্যাঙ্ক। পাশাপাশি তেলের দাম কোন দিকে যায়, তার উপরেও টাকার দামের অবস্থান অনেকটাইনির্ভর করবে।
গত ২১ জুলাই প্রতি ডলারের দাম ৮০.০৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। তবে তার পর থেকে বাড়তে থাকে ভারতীয় মুদ্রার দর, পড়ে ডলার। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার, এই চার দিনের লেনদেনেই প্রতি ডলারের দাম ১৩৪ পয়সা কমেছে।
টাকার দামের উত্থানে বড় ভূমিকা পালন করেছে ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীদের লগ্নি বৃদ্ধির বহর। ওই চার দিনে ভারতের বাজারে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ার কিনেছে ৫৮২৯.৫০ কোটি টাকার। এর ফলে বাজারে বেড়েছে ডলারের জোগান। কারণ, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে ডলার নিয়ে এসে তা টাকায় পরিণত করেই শেয়ারে লগ্নি করে। বাজারে্ ডলারের জোগান বেড়ে যাওয়ার ফলে কমেছে তার দাম।
পাশাপাশি গত কয়েক দিন আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমেছে। যার ফলে তা আমদানি করতে ডলার খরচও কমেছে। ডলারের সাপেক্ষে টাকার মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তেলের দাম কমারও ভূমিকা রয়েছে।
তবে টাকার দামের পতনের সমস্যা কেটে গিয়েছে, সেটা এখনই জোর দিয়ে অবশ্য বলা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই।