একই দিনে করে সিএআইটির অভিযোগ, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি সংক্রান্ত বিধি ভাঙার চেষ্টা করছে বহুজাতিক ই-কমার্স সংস্থাগুলি।
ফাইল চিত্র।
অ্যামাজ়ন-ফিউচার মামলায় জটিলতা আরও বাড়ল। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আমেরিকার ই-কমার্স সংস্থাটির আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যন জানিয়ে দিলেন, চেষ্টা সত্ত্বেও আদালতের বাইরের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। একই দিনে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফিউচার গোষ্ঠী এবং রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনে সংস্থাটি। তাদের দাবি, আদালতকে অন্ধকারে রেখে সম্পদ হাতবদল হচ্ছে ওই দুই সংস্থার মধ্যে। এই পথে আর এগোলে ফের আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এই নিয়ে ফিউচার এবং রিলায়্যান্সের অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একই দিনে বিদেশি ই-কমার্স সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি। ফলে সব মিলিয়ে গোটা বিষয়টি একটি অন্য মাত্রা পেয়েছে।
ফিউচার ও অ্যামাজ়নের মধ্যে বিবাদের মামলা চলছে আদালতে এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অধীনে। গত ৩ মার্চের শুনানিতে প্রায় অপ্রত্যাশিত ভাবেই সুব্রহ্মণ্যন আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর প্রস্তাব দেন। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে ১০ দিন সময় দেয় আলোচনার জন্য। কিন্তু এ দিন শুনানিতে সুব্রহ্মণ্যন বলেন, ‘‘আলোচনা শেষ এবং ব্যর্থ। এখন আর কিছু করার নেই।’’
সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত এবং ভারতের আদালতে অ্যামাজ়নের করা মামলার জেরে ফিউচার গোষ্ঠীর রিলায়্যান্স রিটেলকে ব্যবসা বিক্রির প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। যে চুক্তির অঙ্ক ২৪,৭১৩ কোটি টাকা। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন আরও রুগ্ণ হয়েছে কিশোর বিয়ানির ফিউচার গোষ্ঠীর সংস্থাগুলি। এরই মধ্যে বিগ বাজার, এফবিবির মত ব্র্যান্ডের বিভিন্ন বিপণির ভাড়া মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। সম্প্রতি ওই সমস্ত বাড়ির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে বিপণিগুলি নিজেদের হাতে নেয় রিলায়্যান্স রিটেল। তা ফের সাব-লিজ় দেয় ফিউচার রিটেলকে। কিন্তু ফিউচার রিটেলও ভাড়া মেটাতে না পারায় রিলায়্যান্স সেই লিজ় খারিজ করে বিপণিগুলি নিজেদের হাতে নিতে শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫০টি বিপণি রিলায়্যান্সের হাতে এসেছে বলে খবর।
এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিভিন্ন খবরের কাগজে ‘পাবলিক নোটিস’ শীর্ষক বিজ্ঞাপন দিয়ে একে ‘প্রতারণা’ বলে দাবি করেছে অ্যামাজ়ন। লিখেছে, ‘‘ভারতের সাংবিধানিক আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে গোপনে এগুলি হচ্ছে।’’ তাদের অভিযোগ, ফিউচার রিটেলের প্রোমোটারেরা জেনেশুনে সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, রিলায়্যান্সের সঙ্গে তাদের চুক্তি এনসিএলটির সম্মতি পাওয়া পর্যন্ত খুচরো ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় সম্পদ তাদের হাতেই থাকবে। অথচ এখন ঘুরপথে তা হাতবদল করা হচ্ছে। ওই সমস্ত সম্পত্তি সংস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলে ফিউচার গোষ্ঠীর প্রোমোটার এবং যারা এই কাজে সাহায্য করছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আদালতে আলোচনায় ব্যর্থতার কথা জানান অ্যামাজ়নের আইনজীবী। ফিউচার রিটেলের সম্পত্তি যাতে অন্য কারও হাতে না যায়, সে ব্যাপারে আদালতকে হস্তক্ষেপের আর্জিও জানান তিনি। এই অভিযোগ নিয়ে অ্যামাজ়নকে আবেদন জানাতে বলেছে শীর্ষ আদালত।
একই দিনে করে সিএআইটির অভিযোগ, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি সংক্রান্ত বিধি ভাঙার চেষ্টা করছে বহুজাতিক ই-কমার্স সংস্থাগুলি। তাদের বক্তব্য, এক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা এবং পাইকারি ব্যবসায় ১০০% এফডিআইয়ের অনুমতি আছে। কিন্তু বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় তা ৫১%। অথচ, বিদেশি সংস্থাগুলি বিক্রেতাদের উপরে প্রভাব খাটিয়ে এবং গুদামের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে খুচরো ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে দেশীয় পণ্য উৎপাদনকারী, বিক্রেতা, ছোট-মাঝারি সংস্থা বিপদের মুখে পড়বে। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে আর্জি জানিয়েছে সিএআইটি।