প্রতীকী ছবি।
স্বস্তি নেই পর্যটন ব্যবসায়!
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এবং উত্তরবঙ্গকে ঘিরে এ বার পুজোয় হৃত বাজারের কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছিল পর্যটন, হোটেল, হোম স্টে, গাড়ি সংস্থা-সহ সার্বিক ভাবে পর্যটন শিল্প। এ বার তারা তাকিয়ে ছিল, পুজো পরবর্তী শীতের মরসুমের দিকে। কিন্তু নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ক্রমাগত বৃষ্টি ও বন্যায় পাহাড়ে ধস নামায় এবং রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত তাদের উপরে সাময়িক ভাবে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজ্যের পর্যটন শিল্প। বিশেষত সিকিম, উত্তরবঙ্গ বা উত্তরাখণ্ডের পাদদেশে সংক্রমণ এড়িয়ে নিরিবিলিতে ভ্রমণের আগ্রহের জেরে যে সব হোম স্টের চাহিদা বেড়েছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলে সেখানে পর্যটন ফের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থাকার পরে করোনাবিধি মেনে স্বল্প দূরত্বে বা নিরিবিলিতে বেড়াতে যাওয়া শুরু করেছিলেন পর্যটকেরা। তবে সার্বিক ভাবে ব্যবসা এখনও প্রাক-করোনা পর্বের ৩০% পেরিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (টাব) সেক্রেটারি অমিতাভ সরকার। তবে তিনি বলছেন, পুজোর ছুটিতে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল যথেষ্টই। অ্যাসোসিয়েশন অব ডোমেস্টিক টুর অপারেটর্স অব ইন্ডিয়ার রাজ্যের চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্তের মতে, স্মরণকালে উত্তরবঙ্গে ও সিকিমে এ বারের মতো ব্যবসা হয়নি।
পুজোর ছুটি শেষে শীতের মরসুমে সেই ধারাই বজায়ের ইঙ্গিত রয়েছে বুকিংয়ের পরিসংখ্যানে। রাজ্যের বাইরে কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ডের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। পর্যটন মহলের নানা সূত্রের মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জায়গা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় আগামী ক’দিনে যাঁদের বুকিং রয়েছে, তাঁদের একাংশের তা বাতিলের সম্ভাবনা থাকছে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত সে রকম ঘটনা সামনে না-এলেও, অনেকেই সংস্থার কাছে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।
দেবজিতের বক্তব্য, সিকিম ও উত্তরবঙ্গে গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা প্রত্যন্ত এলাকায় অন্তত ৬০টি হোম স্টের চাহিদা বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেখান পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা কী অবস্থায় রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেগুলি অবরুদ্ধ হলে সেখানকার পুরো ব্যবসাই মার খেতে পারে। সব মিলিয়ে স্বল্প মেয়াদে ব্যবসায় প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা টাবে-র প্রাক্তন সেক্রেটারি নীলাঞ্জন বসুরও।
তবে তাঁদের সকলেই আবার একেবারে নিরাশায় ডুবতে নারাজ। তাঁদের প্রথম যুক্তি হল, করোনাবিধি মেনে ও প্রতিষেধক নিয়ে পর্যটকদের বেড়ানোর উৎসাহে ভাটা না-পড়া। অমিতাভ ও নীলাঞ্জনের মতে, কত দ্রুত মেরামতি করে যোগোযোগ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা ধাক্কা খাওয়া। এর সে জন্য মেরামতির অতীত অভিজ্ঞতার উপরেই ভরসা রাখছেন দেবজিৎ। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন থেমে যায়, সেই আশাতেই রয়েছেন সকলে।