অট্টহাসি: সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং (বাঁ দিকে) ও তাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুৎ চ্যান-ও-চা-এর সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত নরেন্দ্র মোদী। রবিবার ব্যাঙ্ককে, আসিয়ান-ইন্ডিয়া সম্মেলনে। এএফপি
দেশের মাটিতে পড়ে রইল চাহিদার অভাবে কাহিল অর্থনীতির মলিন ছবি। বৃদ্ধি থেকে শিল্পোৎপাদন হয়ে পরিকাঠামো— একের পর এক পরিসংখ্যানে গভীর থেকে গভীরতর হল উদ্বেগ। বিভিন্ন শিল্পে ছাঁটাইয়ের আতঙ্ক আরও চেপে বসল অক্টোবরে তিন বছরের সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হিসেবে। আর দেশের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লগ্নির ডাক দিতে গিয়ে তুলে ধরলেন সেই অর্থনীতিরই বিজ্ঞাপন। তবে তা থেকে যাবতীয় ‘কাঁটা’ বাদ দিয়ে, স্রেফ কর-সংস্কারে ভর করে।
রবিবার তাইল্যান্ডে বিশ্বের তাবড় শিল্পপতিদের সামনে ভারতীয় অর্থনীতির বিজ্ঞাপন জুড়ে থাকল তাঁর জমানায় শিল্প-বান্ধব ও সরল কর ব্যবস্থা, হেনস্থা রুখতে তা আদায়ের নতুন বন্দোবস্ত, সাধারণ মানুষের হাতে সরাসরি ভর্তুকি তুলে দেওয়া, লাল ফিতের ফাঁস আলগা হওয়া, সহজে ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৪২ থেকে লাফিয়ে ৬৩-তে পা দেওয়া, পাঁচ বছরেই ২ লক্ষ কোটি থেকে ৩ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হওয়ার গল্প। রইল কর্পোরেট কর কমিয়ে আনা নিয়ে বড়াইও।
যা শুনে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ছ’বছরের তলানি ছোঁয়া (৫%) বৃদ্ধির হারে গতি আনতে বেসরকারি লগ্নি ছাড়া উপায়ও নেই সরকারের সামনে। তাই সেই চেষ্টায় কোনও কসুর করছেন না মোদী। যদিও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় তাতে কাজ কতটা হবে, তাই নিয়ে সংশয়ী অনেকেই। একাংশের আবার প্রশ্ন, লাল ফিতের ফাঁস আলগা হওয়ার কথা মোদী বললেন কী করে? ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের সহজে ব্যবসা করার তালিকায় দেশ ১৪ ধাপ এগোলেও, ব্যবসা শুরুর মাপকাঠিতে সেই পিছিয়েই। যা থেকে স্পষ্ট ফাঁস কাটেনি। যা লগ্নি টানার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
তাইল্যান্ডে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে অবশ্য লগ্নির গন্তব্য হিসেবে ভারত কতটা লোভনীয়, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন মোদী। কর্পোরেট কর ছাঁটাই, জিএসটি চালুর উদাহরণ টেনে তুলে ধরেছেন তাঁর জমানায় করা সংস্কারগুলির কথা। বার্তা দিয়েছেন, পরিচয়হীন পদ্ধতিতে কর আদায়ের। বলেছেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির লক্ষ্যে আমলাতন্ত্র ও গতানুগতিক পথের বাইরে হেঁটে একগুচ্ছ আর্থিক সংস্কারের কথা। শুধু তাই নয়, লগ্নিকারীদের সামনে মোদীর প্রতিশ্রুতি, আগামী দিনে সাধারণ মানুষের জন্য কর ব্যবস্থাকে আরও সরল করতে দায়বদ্ধ তাঁর সরকার।
অর্থনীতিকে ৫ লক্ষ কোটি ডলার করার স্বপ্ন ফেরি করছেন মোদী। দেশে চাহিদা ও লগ্নির ভাটা দেখে যা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয়ী বিরোধী থেকে অর্থনীতিবিদ সকলেই। তবে তাইল্যান্ডে মোদীর বার্তা, ওই স্বপ্নকে সঙ্গী করেই এগোচ্ছে ভারত।