আমেরিকায় ঝাঁপ বন্ধ হল আরও একটি ব্যাঙ্কের। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক (এসভিবি) দেউলিয়া হয়ে ঝাঁপ বন্ধ করেছে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর এসভিবি-ই বৃহত্তম ব্যাঙ্ক যারা দেউলিয়া হওয়ার কথা ঘোষণা করল। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, মাত্র দু’দিনের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে আমেরিকার অন্যতম বড় ব্যাঙ্ক। কিন্তু এসভিবির দেউলিয়া হওয়ার জের সোজা এসে কি পড়েছে মুম্বই উপকূলে! কারণ, এসভিবির দেউলিয়া হওয়ার পর থেকেই সুদূর মুম্বইয়ের এসভিসি ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের একাংশের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ, তাঁদের আমানত সুরক্ষিত তো?
আজ থেকে ১১৬ বছর আগে মুম্বইয়ে তৈরি হয়েছিল ‘শামরাও ভিথাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক’ সংক্ষেপে এসভিসি ব্যাঙ্ক। যার সঙ্গে ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরের ক্যালিফোর্নিয়ার এসভিবির সঙ্গে কোনও প্রত্যক্ষ যোগই নেই। এসভিবির বয়স মেরেকেটে ৪০ বছর। কিন্তু দুই নামে সামান্য মিল রয়েছে বটে। এর উপর দাঁড়িয়েই শনিবার বাণিজ্যনগরীতে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে এসভিসি ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ। পরিস্থিতি এমন হয় যে, শতবর্ষ প্রাচীন মুম্বইয়ের সমবায় ব্যাঙ্ককে বিবৃতি পর্যন্ত জারি করতে হয়। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করতে হয়, আমেরিকার ‘ফেল’ করা ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ নেই।
তাতেই অবশ্য নিস্তার নেই। অনেক গ্রাহকই টুইটে মুম্বইয়ের ব্যাঙ্ককে একই প্রশ্ন করেছেন। সকলেরই একটিই বক্তব্য, আমেরিকার ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে কি তাঁদের আমানতেও তার প্রভাব পড়বে? টুইটারে বেশ কয়েক জনকে মুম্বইয়ের ব্যাঙ্কটি সত্যি ঘটনা খুলে বলেছে। জানিয়েছে, তাদের আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে। ভয়ের কোনও কারণই নেই। এই ধরনের গুজব যাঁরা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে চলছে হাসিঠাট্টাও। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘এর পর নিশ্চয়ই এসএলবি (সঞ্জয় লীলা ভনসালি) বিবৃতি জারি করবেন এ ব্যাপারে। সত্যি, ভারত কিন্তু অতুলনীয়!’’ অনেকেই এই গুজব ছড়ানোর পিছনে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি’কে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার এসভিবি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে পুঁজির যোগান দিত। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় ফেড রিজার্ভ গত এক বছরে ৪৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বৃদ্ধি করেছে। স্বভাবতই তাতে ধাক্কা খেয়েছে আমেরিকার অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ যদিও মনে করছেন, ২০০৮ সালের ‘লেম্যান ব্রাদার্স’ অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, এসভিবি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ঋণ দেওয়ার মধ্যে নিজেদের কারবার সীমাবদ্ধ রাখত। তা হলে কি এসভিবির দেউলিয়া হওয়ার কোনও প্রভাবই পড়ার সম্ভবনা নেই ভারতে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়া জমানার স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বেই পসার ছিল এসভিবির। তাই ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির একাধিক স্টার্টআপেরও সেই ব্যাঙ্কে খাতা থাকতে পারে। এসভিবি দেউলিয়া হলে তার প্রভাব সেই স্টার্টআপ এড়াতে পারবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, এসভিবি দেউলিয়া হলে কি ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত মুম্বইয়ের সমবায় ব্যাঙ্ক এসবিবির? বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, তা সম্ভব না।