প্রতীকী ছবি।
অর্থনীতির মন্দার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সঞ্চয় কমছে। কিন্তু উল্টো দিকে নগদ টাকায় সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ব্যাঙ্কে জমা কমলেও মানুষ আগের তুলনায় বেশি মাত্রায় নগদে টাকা জমাচ্ছেন। কিন্তু কেন এই প্রবণতা, তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অর্থনীতিবিদেরা।
পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নোট বাতিল করে ‘নগদহীন অর্থনীতির’ কথা বলেছিলেন। তাতে হাল বদলেছে কি না, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। কারণ নোটবন্দির প্রভাব কাটার পরেই দেখা গিয়েছিল, মানুষের হাতে নগদ রেখে দেওয়ার অভ্যাস পাল্টায়নি। উল্টে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, গত দু’বছরের তুলনায় অতিমারির বছরে নগদে সঞ্চয়ের
মাত্রা বেড়েছে।
২০১৮-১৯ সালে দেশের মানুষ ২.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা নগদে সঞ্চয় করেছিলেন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তার পরিমাণ মোটামুটি একই ছিল, ২.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু আরবিআই-এর হিসেব অনুযায়ী, কোভিডের বছরে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসেই দেশের মানুষ নগদে ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন। যার অর্থ, সারা বছরে নগদে সঞ্চয়ের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
কেন এ ভাবে নগদে টাকা জমানোর পরিমাণ বাড়ছে? অর্থ মন্ত্রকের অর্থনীতিবিদ বা আর্থিক উপদেষ্টাদের কাছে এখনও এর তেমন ব্যাখ্যা নেই। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, গত বছরে দেখা গিয়েছে, সঞ্চয়ের পরিমাণ কমছে। গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে করোনা ধাক্কা দেওয়ায় লকডাউন জারি হয়। রুজিরুটি নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে মানুষ সাবধানতাবশত বেশি করে সঞ্চয় করতে শুরু করেন। লকডাউনের জেরে বাজারহাট বন্ধ থাকায়, অপ্রয়োজনীয় খরচ না-হওয়ার ফলেও তা বেড়েছিল। তার পরে লকডাউন উঠলে খরচ হয়েছে। সর্বোপরি মানুষের আয় কমে যাওয়ার ফলেও সঞ্চয়ে টান পড়েছে। কিন্তু নগদে টাকা রাখার প্রবণতা কেন বাড়ছে, তার স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তা হলে নোট বাতিল করে লাভ কী হয়েছিল, জবাব নেই তারও।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মানুষের মোট সম্পদের মধ্যে এখন নগদের পরিমাণ ২৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রকের আর এক কর্তা বলেন, ‘‘পিপিএফ, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমতে থাকায় করোনার মধ্যে বহু মানুষ শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে শুরু করেছেন। তাঁরা অবশ্যই আয়ের দিক থেকে উপরের সারিতে থাকা মানুষ। সেই তুলনায় নীচের সারিতে থাকা আমজনতা বা দারিদ্রসীমা থেকে উঠে আসা মানুষই সম্ভবত নগদে বেশি টাকা জমাচ্ছেন।’’ মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয়েছিল। এখন গরিব মানুষ কেন ব্যাঙ্কে টাকা না-রেখে বাড়িতে নগদ জমাচ্ছেন, তারও উত্তর নেই অর্থ মন্ত্রকের কাছে।