এমবিএ করে গত ১৫ বছর ধরে ভাল চাকরি করছিলেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা শূন্যস্থান রয়ে গিয়েছিল। নিজের কিছু করার প্যাশনের সেই জায়গাটা ফাঁকাই থেকে গিয়েছিল। ইচ্ছা ছিল, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কিছু করার।
সেই ‘কিছু করার’ ইচ্ছা থেকেই এমবিএ-র চাকরি থেকে জৈব চাষাবাদ শুরু করেন মনিকা। মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি। মাত্র দু’বছরের মধ্যে মাশরুম চাষে তাঁর উপার্জন কত দাঁড়িয়েছে জানেন?
মাসে এক লাখ টাকারও বেশি। ঠিকই পড়ছেন। শুধুমাত্র মাশরুম চাষ করেই মাসে এক লাখ টাকা উপার্জন করছেন তিনি।
যাঁর কথা হচ্ছে তিনি মনিকা চৌধুরি। অঙ্কে স্নাতক মনিকা দিল্লির বাসিন্দা। স্বামী এবং দুই সন্তান নিয়ে তাঁর সুখের সংসার।
সেই সংসারে আরও বেশি সুখ এনে দিয়েছে মাশরুম চাষ। কারণ, উপার্জন যেমন বেড়েছে, আগের থেকে অনেক বেশি সময় তিনি পরিবারকে দিতে পারছেন।
১৫ বছর চাকরি করা মনিকা চাকরি ছেড়ে নিজের কিছু ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছিলেন। তাঁর স্বামীর এক বন্ধু প্রথম তাঁকে মাশরুম চাষের পরামর্শ দেন।
সেই বন্ধুই তাঁকে ডিরেক্টরেট অব মাশরুম রিসার্চের একটি প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার কথা জানান।
মাশরুম চাষের পদ্ধতি এবং মাশরুমের উপকারিতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেখানে।
প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার পরই মনিকা মাশরুম চাষ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ছেড়ে দেন চাকরি। দিল্লিতে ছোটখাটো একটা মাশরুম ফার্ম করে ফেলেন।
প্রোটিন, ফাইবার এবং মিনারেলের খুব ভাল উত্স মাশরুম। মানুষের সুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার যে ইচ্ছা ছিল, সেটাও পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা মাশরুম চাষে দেখতে পান তিনি।
কিন্তু বাধা ছিল একটাই। মাশরুমের ফলন বাড়ানোর জন্য এবং মাশরুমকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাসায়নিক দেওয়াটা জরুরি। কিন্তু মনিকা কোনওরকম রাসায়নিক ব্যবহার করতে চাইছিলেন না।
রাসায়নিক ছাড়া মাশরুমের ভাল ফলনের পরামর্শ তাঁকে কেউ দিতে পারেননি। ফলে মনিকাই অন্য উপায় বার করে নেন।
তিনি খারাপ স্পনগুলো বাদ দিয়ে মাশরুম চাষ করতে শুরু করেন। এতে প্রথম ৩-৪ মাস তাঁর বেশ ক্ষতি হয়েছিল। কোন স্পনের স্বাস্থ্য খারাপ আর কোন স্পনের স্বাস্থ্য ভাল তা বুঝতেই বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল তাঁর।
প্রথম বছরটা তেমন লাভ করতে পারেননি মনিকা। তবে দ্বিতীয় বছরে অভাবনীয় ফল পেতে শুরু করেন তিনি।
প্রথম প্রথম মনিকা ২০-২৫ কেজি মাশরুম ফলাতে পারতেন। বর্তমানে প্রতি মাসে ৪০-৪৫ কেজি মাশরুম উত্পাদন হয়। মাসে আয় করেন লক্ষাধিক টাকা।