৪৩ বছর আগে যখন আমেরিকায় গিয়েছিলেন, সঙ্গে ছিল একটি মাত্র ব্যাগ আর অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্নে ভর করেই তামিলনাড়ু থেকে আমেরিকার নাম করা ভারতীয় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন তিনি।
তিনি মনি কৃষ্ণন। তামিলনাড়ুর বাসিন্দা মনি আমেরিকার জনপ্রিয় দোসা বিক্রেতা। মূলত দোসার ব্যাটার বিক্রি করেন তিনি। তাঁর সংস্থা ‘সস্তা ফুড’ সেখানে ভারতীয়দের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
১৯৬৩ সালে তাঁর পরিবার কর্মসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যায়। কিন্তু মনিকে তখন ভারতেই রেখে যান তাঁরা। মনি এখানে থেকেই পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর ১৯৭৭ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় পরিবারের কাছে যান।
এর আগে মুম্বইয়ে অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাজ করতেন। আমেরিকায় পৌঁছে একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় যোগ দেন। কয়েক বছর কাজ করার পর টাকা জমিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেন।
চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। প্রথমে হাত লাগিয়েছিলেন কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসায়। ২০ বছর পরে বুঝেছিলেন এ ব্যবসা তাঁর জন্য নয়। এত চেষ্টার পরও সে ভাবে দাঁড় করাতে পারেননি ব্যবসা।
তার পরই তাঁর খাবারের ব্যবসায় আসা। আমেরিকায় চটজলদি এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের খুব চাহিদা। সেখানে ভারতীয় গ্রাহক ধরার জন্য চটজলদি ভারতীয় খাবার তৈরির পরিকল্পনা করে ফেললেন তিনি।
দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় খাবার দোসার কথাই তাঁর মাথায় প্রথম আসে। বাড়ি বন্ধক রেখে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মিলে শুরু করে দেন দোসার ব্যাটার বানানো।
বাড়ির রান্নাঘর থেকে শুরু করা এই দোসা এখন আমেরিকার ৩৫০টি দোকানে জায়গা করে নিয়েছে। অনলাইনেও বাড়ি বসে পাওয়া যায় এই দোসা ব্যাটার।
আমেরিকার পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসও তাঁর দোসা খেয়ে প্রশংসা করেছেন।
২০০৩ সালে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এর মাত্র ৫ বছরের মধ্যে ব্যবসার এতটাই প্রসার ঘটে যে বন্ধক রাখা বাড়িটিও ছাড়িয়ে নেন তিনি।
তবে চ্যালেঞ্জও কিছু কম ছিল না। দোসা বানানোর মূল উপাদান চাল এবং ডাল ভারত থেকে নিয়ে যাওয়াতে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
ব্যবসা শুরু করার আগে তাঁকে এই সমস্ত উপাদানের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হত। তা না হলে মাঝপথেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারত।
তাই আমেরিকার পাশাপাশি তিনি আফ্রিকা এবং দুবাই থেকে চাল কিনতে শুরু করেন। স্ত্রীয়ের সঙ্গে নিজের রান্নাঘরেই নানা ধরনের দোসা ব্যাটার বানাতে শুরু করলেন।
অনেক পরীক্ষার পর তাঁরা সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর এবং পকেটবান্ধব দোসা ব্যাটার তৈরি করতে শুরু করেন। প্রথমে নিজেরাই ব্যাটার বানিয়ে সেগুলো প্যাকিং করে বাড়ি বাড়ি দিয়ে আসতেন। রোজ ভোরে দিন শুরু হত তাঁদের। নিজেদের খাওয়াদাওয়া ভুলে যেতেন অনেক সময়।
অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরেই ১৭ বছরের চেষ্টায় স্বপ্ন পূরণ করে ফেলেছেন তিনি। জনপ্রিয় ‘সস্তা ফুড’ সংস্থার মালিক হয়েছেন।
২৫ জন কর্মী কাজ করেন তাঁর সংস্থায়। আর প্রতি সপ্তাহে সাড়ে ১২ হাজার কিলো দোসার ব্যাটার বানান তিনি।