অল্পবিস্তর ওঠানামা করে সেনসেক্স এখন ২৮ হাজারের দোরগোড়ায়। হারানো জমি কিছুটা উদ্ধার হয়েছে। এখনও হাজার দুয়েক পয়েন্ট বাকি। নজর এক দিকে যেমন নিয়মিত প্রকাশিত ফলাফলের উপর, অন্য দিকে তেমনই অপেক্ষা ২ জুন দিনটির জন্য। সবাই এক রকম ধরেই নিয়েছেন ওই দিন আরও এক দফা সুদ কমবে। বাস্তবে তা মিলে গেলে শেয়ার বাজার তার শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হবে। তবে সুদ না-কমলে হতাশার চাপে সূচক সাময়িক পড়বে। এর আগের সপ্তাহটা বাজারকে ব্যস্ত রেখেছিল শেষ বেলায় প্রকাশিত বহু সংস্থার বার্ষিক ফলাফল।
বেশ কয়েকটি বড় মাপের কোম্পানি ফলাফল প্রকাশ করেছে গত সপ্তাহে। কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক খারাপ ফলাফল প্রকাশ করার পর, ‘শেষরাতে’ মাঠে নেমেছে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক। বছরের শেষ তিন মাসে ভারতের বৃহত্তম এই ব্যাঙ্কের নিট লাভ ২৩ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৩,৭৪২ কোটি টাকায়। গোটা বছরে লাভ বেড়ে হয়েছে ১৪,৭১১ কোটি। পাশাপাশি কমেছে অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত। বেড়েছে সুদজনিত আয়। সব মিলিয়ে আশা জাগানো ফলাফল। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাঙ্কের শেয়ারের দামে। শুক্রবার স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার দর কিছুটা উঠে আবার পৌঁছেছে ৩০০ টাকার কাছাকাছি।
শেষ তিন মাসে অগ্রণী ভোগ্যপণ্য সংস্থা আইটিসি-র নিট মুনাফা ৩.৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৩৬১ কোটি টাকায়। তাদের এই ফলাফলে বাজার তেমন খুশি নয়। বছরের শেষ তিন মাসে এমআরপিএল-এর লাভ ৯.৬ শতাংশ বেড়ে স্পর্শ করেছে ১,১৭০ কোটি টাকা। ওএনজিসি গোষ্ঠীর এই সংস্থাটি ১০০টি পেট্রোল পাম্প স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে। বজাজ অটোর নিট লাভ ১৮.৬২ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৬২২ কোটি টাকায়। ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে কলকাতার সিইএসসি ঘরে তুলতে পেরেছে ১৯৯ কোটি টাকার মুনাফা। এই সংস্থার লাভও হতাশ করেছে লগ্নিকারীদের। ফলে নেমেছে তাদের শেয়ারের বাজারদর।
আগামী কয়েক মাস শেয়ার সূচকের চাঙ্গা থাকা খুব জরুরি। কারণ, এই সময়ে বাজারে আসার কথা একগুচ্ছ নতুন ইস্যুর। বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মোদী সরকার চলতি আর্থিক বছরে ৪১,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতও হচ্ছে সরকার।
২৩৪টি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে মাত্র ৪৬টি এখনও পর্যন্ত শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি করে কেন্দ্র ঘরে তুলতে চায় ২৫,০০০ কোটি। এই ব্যাপারে যে সব সংস্থার কথা ভাবা হচ্ছে, তাদের মধ্যে আছে ওএনজিসি বিদেশ, ভারত ব্রডব্যান্ড, মাজাগাঁও ডকস, সাদার্ন কোলফিল্ডস ইত্যাদি সংস্থা। তখন বাজার চাঙ্গা থাকলে তবেই সরকার শেয়ারের ভাল দাম পাবে। কিন্তু বাজার তেজি থাকার পথে বড় বাধা হতে পারে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত। এই আশঙ্কার কথা এরই মধ্যে শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বৃষ্টি কম হলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। বাড়বে মূল্যবৃদ্ধির হার। ফলে সুদের আরও কমার সম্ভাবনা থাকবে না। দুর্বল হয়ে পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি। চাহিদা কমবে সোনা, ছোট গাড়ি, বাইক-স্কুটার, অন্যান্য ভোগ্যপণ্য এবং এমনকী নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যেরও। ফলে খারাপ দিন আসতে পারে এই সব শিল্পে। নতুন করে লগ্নি করার সময়ে এই কথা মাথায় রাখতে হবে।
মানুষের বিনিয়োগ এখন নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকে। এমন বহু লগ্নিকারী আছেন যাঁরা একই সঙ্গে শেয়ার, বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ড-সহ অনেক জায়গাতেই টাকা ঢালেন। পরে শক্ত হয়ে পড়ে সব জায়গা থেকে সুদ ডিভিডেন্ড ইত্যাদি পাওয়া গেল কি না, তা জানা। সম্প্রতি সেবি এনএসডিএল এবং সিডিএসএল-কে অনুমতি দিয়েছে লগ্নিকারীদের এমন স্টেটমেন্ট তৈরি করে দিতে, যা থেকে জানা যাবে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নগদ আয় আপনার ঘরে পৌঁছল কি না। এ ছাড়া, এর আর একটি বড় সুবিধা হল, আপনার সব লগ্নি একটিমাত্র স্টেটমেন্টেই দেখতে পাবেন। ফলে ভুলে যাওয়া অথবা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। লগ্নি উদ্ধার করা সহজ হবে উত্তরাধিকারীদের পক্ষে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল পদক্ষেপ।