করোনাভাইরাসের জেরে চিনে কিছু শিল্প আংশিক বন্ধ থাকার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য দেশগুলিতে। যার কিছুটা প্রভাব দেখা যাচ্ছে শেয়ার বাজারেও। বৃহস্পতিবার সেনসেক্স ১৫৩ পয়েন্ট নেমেছে। তবে তা এখনও রয়েছে ৪১ হাজারের উপরেই। চিনে করোনার প্রভাবে ভারতীয় শিল্পের তেমন ক্ষতি হবে না, এই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সে দেশে উৎপাদন যদি আরও কিছু দিন বন্ধ থাকে, তার প্রভাব ভারতে অবশ্যই পড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
গত এপ্রিল-ডিসেম্বরে চিন থেকে ৫২০০ কোটি ডলারের পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করেছে ভারত। রফতানির অঙ্ক ১৩০০ কোটি। এই লেনদেন কমতে থাকলে, তার প্রভাব দেশের শিল্পে পড়বে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইস্পাত, তেল ও গ্যাস, বৈদ্যুতিন ও বৈদ্যুতিক পণ্য ও যন্ত্রাংশ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ওষুধ, রাসায়নিক, দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি শিল্প। তবে অনেকের মতে, চিন থেকে অন্যান্য দেশে রফতানি কমলে, তা ভারতের কাছে সুযোগ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় করোনা নিয়ে আশা-আশঙ্কাই আগামী ক’দিন ঠিক করবে সূচকের গতিপ্রকৃতি। ফলে এই অস্থির সময়ে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে বাজারে।
দিন দশেক হল শেষ হয়েছে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ। একটি সমীক্ষা বলছে, বেশ কিছু বড় সংস্থার বিক্রি কমলেও লাভ বেড়েছে। পণ্যের চাহিদা কমলে বিক্রি কমা স্বাভাবিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিট লাভ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উঠে আসছে মুনাফায় কর কমানোর সিদ্ধান্ত। আর লাভ বাড়ায়, বেড়েছে শেয়ার পিছু আয়। তবে শিল্প তথা সংস্থাগুলির উপরে করোনা কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা বোঝা যাবে চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ফল দেখলে।
এ দিকে আয় কমা ও খরচ বাড়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেশের সঞ্চয়ের হার। গত অর্থবর্ষে নেমেছে ৩০.১ শতাংশে, যা ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১১-১২ সালে এই হার ছিল ৩৪.৬%। আর আর্থিক মন্দার ঠিক আগে ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে ৩৬%। দেশের সঞ্চয়ের প্রায় ৬০% আসে গৃহস্থের সঞ্চয় থেকে। ব্যাঙ্ক, ডাকঘর-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে সুদের হার ক্রমাগত কমায় মানুষের আকর্ষণ কমছে সঞ্চয়ের প্রতি। এই অবস্থায় কেন্দ্রের ইঙ্গিত, সুদ কমানো হতে পারে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। আমজনতাকে বলা হচ্ছে বেশি করে শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নি করতে, যা বেশ ঝুঁকির জায়গা।
দেশে সঞ্চয় কমলে সংস্থাগুলিকে বেশি করে ঝুঁকতে হবে বিদেশি ঋণের প্রতি। ২০১৪-১৫ সালে বিদেশি ঋণ ছিল ৪৭,৫০০ কোটি ডলার। ২০১৮-১৯ সালে হয়েছে ৫৪,৩০০ কোটি। জাতীয় উৎপাদনের নিরিখে ভারতের সঞ্চয়ের হার কমলেও, তা এখনও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। চিনে গত বছর তা ছিল ৪৬%।
২ মার্চ বাজারে প্রথম শেয়ার ছাড়বে (আইপিও) এসবিআই কার্ডস। এর মাধ্যমে প্রায় ৯,৫০০ কোটি টাকা তুলতে চায় সংস্থা। শেয়ারের মূল্যবন্ধনী হতে পারে ৭৫০-৭৫৫ টাকা। বাজারের আশা, ইসুটি ভাল লাভের সন্ধান দিতে পারে সফল আবেদনকারীকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)