প্রতীকী ছবি।
করোনার আবহে সাধারণ রোজগেরে মানুষদের একাংশকে আর্থিক সুরাহা দিতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ভর্তুকির সুবিধা এনেছিল কেন্দ্র। এ রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থার কর্মী ও তাঁদের সংগঠনের অভিযোগ, লকডাউনের সময় বহু নিয়োগকারী বেতন দেয়নি। ফলে পিএফে সরকারি ভর্তুকির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য কর্মীদের সিংহভাগই। ইপিএফ-সহ কিছু সূত্রের হিসেব, রাজ্যে কেন্দ্রীয় সুবিধাটি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন ৬.১৩ লক্ষ কর্মী। কিন্তু তার অর্ধেকের কপালেও জোটেনি তা। ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, রুজি-রোজগারে ধাক্কা লাগা বিপর্যস্ত মানুষ যদি ভর্তুকির সুবিধা না-পান, তবে তা ঘোষণা করে লাভ কী? বকেয়া বেতন ও তার সঙ্গে বকেয়া পিএফের টাকা যাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি জমা দেয়, তা নিশ্চিত করার দাবিও তুলছে একাংশ।
পিএফের নিয়ম, যে সব কর্মী বেতন পাবেন, তাঁদের এই খাতে টাকা দিতে বাধ্য নিয়োগকারী। তবে কেউ কোনও কারণে বেতন না-পেলে, আলাদা করে শুধু পিএফ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এআইইউটিইউসির সভাপতি শঙ্কর সাহার তোপ, “পিএফের টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে কেন্দ্র ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার চালিয়ে হাততালি কুড়িয়েছে। কিন্তু ওই সুবিধা পাওয়ার প্রধান শর্ত ছিল, কর্মীদের বেতন পেতে হবে। বেতন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কিন্তু সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বহু সংস্থা বেতন দেয়নি। অনেকে তা কমিয়েছে। যার নিট ফল, কেন্দ্রের ভাগ্যে জুটেছে বাহবা, আর কর্মীর ভাগ্যে বঞ্চনা।’’
পিএফের অছি পরিষদের সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য জানান, “এই ভর্তুকি পেতে রাজ্যের ৩১,০০০ সংস্থায় ৬.১৩ লক্ষ কর্মী যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তার অর্ধেকেরও বেশি সুবিধাটি পাননি। যার প্রধান কারণ, লকডাউনের সময় বেতন না-পাওয়া।’’
কেন্দ্রের ঘোষণা ছিল
• যে সংস্থায় সর্বোচ্চ ১০০ জন কর্মী ও তাঁদের ৯০ শতাংশের বেতন ১৫,০০০ টাকার মধ্যে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় প্রত্যেকের পিএফ খাতে নিয়োগকারীর দেয় ১২% এবং কর্মীদের নিজেদের দেয় ১২% (অর্থাৎ মোট ২৪%) ভর্তুকি হিসেবে জমা দেবে সরকারই।
• প্রথমে এই সুবিধার মেয়াদ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ছিল। পরে অগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বঞ্চিত হওয়ার কারণ
• লকডাউনের সময় বহু সংস্থা কর্মীদের বেতন দেয়নি। ফলে পিএফ জমা পড়েনি। তাই কেন্দ্রের ভর্তুকি পাওয়ার সুবিধাও মেলেনি।
• বহু কর্মীর আধার নম্বর পিএফের ইউএএন নম্বরের সঙ্গে যুক্ত নেই।
• বহু ছোট সংস্থা বাইরের লোককে দিয়ে পিএফের হিসেব তৈরি করে রিটার্ন জমা দেয় প্রতি মাসে। কিন্তু লকডাউনের সময় তা করায়নি।
পিএফ-ভর্তুকি থেকে যে অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সে কথা বলছেন খোদ আঞ্চলিক পিএফ কমিশনার নবেন্দু রাই-ও। তাঁর আফসোস, “পিএফের সদস্যদের সুবিধাগুলি দিতে আমাদের কর্মীরা করোনা সংক্রমণের মধ্যেও কাজ করেছেন। অথচ কত কর্মী আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেন।’’
তবে তাঁর দাবি, শুধু বেতন না-পাওয়া নয়, বহু কর্মীর আধার নম্বর পিএফ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত নেই। এটা আর এক সমস্যা। আবার বেশ কিছু ছোট সংস্থা বাইরের লোককে দিয়ে পিএফ হিসেব করে প্রতি মাসে রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু লকডাউনে সেটা হয়নি। ফলে অনলাইনে রিটার্ন ঠিক মতো জমা পড়েনি তাদের। এই কারণেও কর্মীরা প্রাপ্য সুবিধা পাননি। নবেন্দুবাবুর আশ্বাস, আধার-পিএফ যুক্ত করলে ও কারও পিএফের টাকা সংস্থা জমা করে থাকলে, বকেয়া ভর্তুকির টাকা ফেরত মিলবে।
অল্প কিছু ক্ষেত্র ছাড়া সমস্ত সংস্থার কর্মীদের বেতন থেকে ১২% পিএফ বাবদ কাটা হয়। সম-পরিমাণ টাকা ওই খাতে জমা দেয় নিয়োগকারী। পেনশন তহবিলে যায় নিয়োগকারীর দেওয়া টাকার বেশিরভাগ অংশই। বাকিটা জমা পড়ে কর্মীর পিএফ অ্যাকাউন্টে। গত মার্চে কেন্দ্র বলেছিল যে সব সংস্থায় সর্বোচ্চ ১০০ জন কর্মী কাজ করেন ও তাঁদের ৯০ শতাংশের বেতন ১৫,০০০ টাকার মধ্যে, সেখানে দু’পক্ষের মোট ২৪% দিয়ে দেবে কেন্দ্র।