মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গৌতম আদানি। ফাইল চিত্র।
আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের জেরে তোলপাড় গোটা দেশ। এই অবস্থায় মঙ্গলবার ফের গৌতম আদানির শিল্প গোষ্ঠীর সঙ্গে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই প্রশাসনিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ, সেই প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানিরাই।
গত বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে রাজ্যের পক্ষ থেকে তাজপুর প্রকল্পের সম্মতিপত্র আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির পুত্র কর্ণের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের পর আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারে ধস নামে। মুছে যায় লগ্নিকারীদের বিপুল পুঁজি। সেই সময়েই প্রশ্ন ওঠে, কী হবে তাজপুর বন্দরের ভবিষ্যৎ? বিশেষত যখন নতুন লগ্নি ও অধিগ্রহণ পরিকল্পনাগুলি স্থগিত রাখছে আদানিরা।
এ দিন ওড়িশা রওনা হওয়ার আগে এক প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘দেশ কয়েক জন চালাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলিতে টাকা থাকছে না। একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। অথচ কিছু মানুষ প্রচুর টাকা সংগ্রহ করছেন। এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক জ়িরো হয়ে গিয়েছে। আদানি থেকে মেহুল (চোক্সী), তাদের (কেন্দ্রের) প্রিয় বন্ধু। বিজেপি সরকার শুধুমাত্র তাদের জন্য কাজ করছে। এটা তাদের (কেন্দ্রের) জন্য মাইনাস টিআরপি এবং তারা এটার জন্য ভুগবে।’’
তবে প্রশাসনের অন্দরের বক্তব্য, সম্মতিপত্রের কারণে প্রকল্পের ভার এখন আদানিদের উপরে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা কাজ শুরু না করলে রাজ্য পদক্ষেপ করতে পারে। তার আগে রাজ্য নিজের অবস্থান থেকে সরলে সমস্যা বাড়বে।
তবে তাজপুরে বন্দর পরিকাঠামো তৈরির কাজ এতটুকু এগোয়নি। হয়নি জমি অধিগ্রহণ। এই পরিস্থিতিতে আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরূপ মন্তব্যে আরও হতাশ তাজপুরের বাসিন্দারা। স্থানীয় যুবক কৌশিক মহাকুড় বলেন, ‘‘ঘটা করে বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে তাজপুরে বন্দর তৈরির দায়িত্ব আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আদানিদের হাল এমনিতেই খারাপ বলে শুনেছি। তারপর এখন মুখ্যমন্ত্রীই তাদের খারাপ বলছেন। এর পর তারা আর বন্দর তৈরি করবে তো!’’ জনৈক চন্দন বাড়ৈয়ের কথায়, ‘‘বন্দর হলে এলাকায় কর্মসংস্থান হবে। তবে কয়েক মাসেই আদানিদের প্রতি রাজ্য সরকারের মোহভঙ্গ হলে তা উদ্বেগজনক।’’ এ বিষয়ে স্থানীয় তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তথা রামনগর-১ ব্লক তৃণমূল সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ জানার মন্তব্য, ‘‘সব কিছুই উপর তলার বিষয়। তবে সবাই বন্দরের অপেক্ষায় রয়েছে।’’