কতটা লাভজনক এই প্রকল্প? ফাইল চিত্র।
বিনিয়োগ মানেই কি পুরুষের জন্য? কথাটা সত্যি না হলেও পরিসংখ্যান বলছে, সিংহভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই বিনিয়োগে বিশেষ মন দিয়ে থাকেন। মহিলাদের বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের বাজেটে ‘মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট’ নামে নতুন একটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে খোলা অ্যাকাউন্টটিতে একজনের নামেই খুলতে পারবেন। পোস্ট অফিস কিংবা অনুমোদিত ব্যাঙ্কে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।
কারা খুলতে পারবেন মহিলা সম্মান সেভিংস অ্যাকাউন্ট?
যে কোনও মহিলা নিজের জন্য এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। অন্য দিকে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে তার অভিভাবক এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বা তার আগে ফর্ম ১ পূরণ করতে হবে। ০১/০৪/২০২৩ তারিখ থেকে এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছে।
অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন
১. প্যান কার্ড
২. আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
৩. ২টি ছবি
৪. আবেদনপত্র
বিনিয়োগের সীমা
এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করার ন্যূনতম অঙ্ক ১০০০ টাকা। এর পরে ১০০ টাকার গুণিতকে যে কোনও অঙ্কই জমা করা যেতে পারে। প্রকল্পে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ২ লক্ষ টাকা। এক বার টাকার অঙ্ক জমা করার পরে পরবর্তী কালে টাকা জমা করা যাবে না।
সুদের হার
এই প্রকল্পের অধীনে বিনিয়োগকারীরা বার্ষিক হিসাবে ৭.৫ শতাংশ স্থায়ী সুদের হার পাবেন। এই সুদ প্রতি তিন মাসে চক্রবৃদ্ধি হারে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে জমা হবে। দুই বছর পূর্ণ হলে সুদ-আসল বাবদ সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ ধরে নেওয়া যাক আপনি ২,০০,০০০ বিনিয়োগ করেছেন। ৭.৫% বার্ষিক হারে দ্বিতীয় বছরের শেষে আপনি মোট ২,৩১,১২৫ টাকা (মূলধন ২,০০,০০০ এবং সুদ ৩১,১২৫) ফেরত পাবেন।
মেয়াদ পূর্তি
যে দিন টাকা জমা দেওয়া হয়েছে, সে দিন থেকে দুই বছর পরে এই আমানতের মেয়াদপূর্তি হবে। সেই সময় ফর্ম ২-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে আবেদন জমা দিতে পারবে এবং তার পরে ওই টাকা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার সময় তা যদি ভগ্নাংশ হয়, সেই ক্ষেত্রে তা টাকার হিসাবে রূপান্তরিত হবে। উদাহরণস্বরূপ পঞ্চাশ পয়সা বা তার বেশি অঙ্ককে এক টাকা হিসাবে গণনা করা হবে।
কর ছাড়ের সুবিধা
স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে সাধারণত ৮০সি ধারায় করছাড় পাওয়া যায়, তবে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক এই রূপ কোনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
টাকা তোলার সুবিধা
যে দিন এই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সেই দিন থেকে প্রথম বছরের পরে মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেও সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী টাকা তুলতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে ফর্ম ৩-এর মাধ্যমে আবেদন জমা করতে হবে। জমা হওয়া ব্যালেন্সের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ টাকা তুলতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা।
যদিও বিশেষ কয়েকটি কারণে মেয়াদপূর্তির পূর্বে এই টাকা তুলতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। সেগুলি হল—
• সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর মৃত্যু হলে নমিনি সেই টাকা তুলে নিতে পারবেন।
• চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা অন্যান্য আর্থিক কষ্টের প্রমাণ নথি দেখিয়েও টাকা তোলা সম্ভব। এই দুই ক্ষেত্রেই সকল নথি পর্যালোচনা করার পরে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট সময়ের আগে বন্ধের অনুমতি দিতে পারে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ।
মেয়াদপূর্তির আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ
যদি বিনিয়োগের ৬ মাস পর কোনও কারণ ছাড়াই টাকা তোলার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে ৭.৫% এর পরিবর্তে ৫.৫% হারে সুদ প্রদান করা হবে।
এ বার দেখে নেওয়া যাক পোস্ট অফিসের অন্যান্য উপলব্ধ প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পের একটি তুলনামূলক আলোচনা
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।