পুরনো পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিল হওয়ার পরে সবে সপ্তাহ দুয়েক পেরিয়েছে। তারই মধ্যে ট্যানারিতে উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। রফতানি ব্যবসাও বাজার হারিয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে এ রাজ্যের চর্মশিল্পকে। যার জন্য হাতে নগদ জোগানের অভাবকেই কাঠগড়ায় তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল।
রাজ্যের ৯০ শতাংশ ট্যানারিই ছোট-মাঝারি শিল্পের আওতায় পড়ে। সমস্যা থেকে রেহাই পেতে তাই এই শিল্পের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার নিয়ম আরও কিছুটা শিথিল করার দাবি তুলেছে তারা।
কাউন্সিল অব লেদার এক্সপোর্টের চেয়ারম্যান রমেশ জুনেজা এবং ক্যালকাটা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমেদ খানের দাবি, কাঁচামালের জোগান থেকে শুরু করে জিনিসপত্র তৈরি, সব ক্ষেত্রেই টাকার টানাটানি ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। যে-সব ট্রাকে কাঁচা চামড়া আসে, সেগুলির খরচ কোনও পরিবহণ সংস্থাই চেক মারফত নিতে চাইছে না। ফলে বহু ট্রাক মাঝপথে আটকে পড়ছে। চামড়া দ্রুত পচনশীল হওয়ায় সেগুলি নষ্ট হয়ে অনেক টাকা লোকসানের আশঙ্কা চেপে বসছে।
তার উপর এই শিল্পের প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিকের অর্ধেকই ভিন্ রাজ্য থেকে আসেন। তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না-থাকায় এবং নগদ জোগানে টান পড়ায় বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করেও এই ডামাডোলের বাজারে সফল হননি। ফলে কারখানায় অনুপস্থিতির হারও বাড়ছে।
কিছু দিন আগে মূলত ছোট শিল্পে নগদের অভাব যুঝতে কেন্দ্র কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, ওভারড্রাফট-এর মতো কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা তোলার সুযোগ দিলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য বলেই দাবি চর্মশিল্পমহলের। তাঁদের বক্তব্য, সেই বিধি আরও শিথিল না-করলে বন্ধ হতে পারে বহু ট্যানারি।
ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চর্মপণ্য রফতানি করে এখানকার বহু সংস্থা। চর্মশিল্পের দাবি, ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ ব্যবসা হারিয়েছে তারা। এর কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বরাত পাঠাতে না-পারা। তাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতির উন্নতি না -হলে ক্ষতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি বাংলাদেশ, চিনের মতো রাষ্ট্র এই সুযোগে রফতানি বাজারে থাবা বসাবে।