ফাইল ছবি
সমস্যা পিছু ছাড়ছে না পাট শিল্পের। দু’বছর আগে আমপানের জন্য পাটের ফলন কমায় বাজারে আকাল দেখা গিয়েছিল কাঁচা পাটের। ফলে দাম হয়েছিল আকাশছোঁয়া। গত বছর ফলন খুব ভাল হওয়া সত্ত্বেও বেআইনি পাট মজুতের ফলে দেখা দেয় দাম নিয়ে সমস্যা। এই বছরও মরসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে পাট চাষ মার খাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে সংশ্লিষ্ট শিল্প মহল।
পাট চাষিরা বলছেন, এ বার গতবারের থেকে প্রায় দেড়গুণ বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমস্যা তৈরি করেছে বৃষ্টির অভাব। এর ফলে গাছ কাটার পরেও পাট পচিয়ে তন্তু বার করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাজারে মরসুমের শুরুতেই পণ্যটি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চটকল মালিকেরা। তাঁদের দাবি, এর জেরে তার দাম বাড়তে শুরু করেছে।
কাঁচা পাট তৈরির জন্য গাছ কেটে সেগুলিকে বৃষ্টির জলে পচাতে হয়। এর হাত ধরে পাটের কাঠি থেকে শাঁস বা পাট আলাদা হয়। তার পরে তা রোদে শুকিয়ে গাঁটি বাধা হয়। পাটের মানও অনেকটা নির্ভর করে এই প্রক্রিয়ার উপরে। কিন্তু এ বার বৃষ্টি তেমন ভাল না হওয়ায় চাষিরা পাট পচাতে পারছেন না বলে দাবি পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার সভাপতি বিপ্লব মজুমদারের। তিনি বলেন, “এ বছর গতবারের থেকে প্রায় দেড়গুণ বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যাঁরা গতবার চাষ করেছিলেন, তাঁরা তো আছেনই। যে সব চাষি চার-পাঁচ বছর চাষ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাঁরাও মাঠে নেমেছেন। ফলে পাটের ফলনও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু বাধ সাধছে অল্প বৃষ্টি। ইতিধ্যেই প্রায় ২০% পাট জমি থেকে তোলা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে তা পচানো সম্ভব না-হওয়ায় বাজারে বিক্রির জন্য পাটকে তৈরি করা যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাশের মতো তৈরি পাট বাজারে এসেছে।’’
জলের এই অভাব মেটাতে রাজ্যের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে কৃষক সভা। বিপ্লববাবু বলেন, “যথেষ্ট বৃষ্টি না-হলে সমস্যা জটিল আকার নেবে। তাই এখনই রাজ্যের হস্তক্ষেপ করা উচিত। পশ্চিমবঙ্গে যে ১২টি জেলায় পাট চাষ হয়, সেখানে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারদের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছি। গভীর এবং অগভীর টিউবওয়েল বসিয়ে জলের অভাবের মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য নবান্নের সায় জরুরি।’’
বাজারে যে পাটের আকাল দেখা দিয়েছে, তা জানিয়েছেন চট মালিকেরাও। তাঁদের সংগঠন আইজেএমএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং একাধিক চটকলের মালিক সঞ্জয় কাজারিয়া বলেন, “ইতিমধ্যেই কাঁচা পাটের দাম কুইন্টালে ৭০০০ টাকা ছাড়িয়েছে। পণ্যটির সরবরাহ কমায় বহু মিল শিফ্ট কমাতে বাধ্য হয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে এই সমস্যা মিটবে, আপাতত সেই আশাতেই রয়েছে রাজ্যের চটকল শিল্প।’’