—প্রতীকী ছবি
কর্মী এবং নিয়োগকারী, দু’পক্ষকে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতি মাসে যে টাকা জমা দিতে হয়, তার অঙ্ক কমানো হয়েছে গত বছর। আর তার জেরেই কর্মী রাজ্য বিমা নিগমের (ইএসআই) সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় আয় দ্রুত কমছে বলে অভিযোগ উঠল। ২১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান এমন কর্মীরা যে ব্যবস্থার ছাতার তলায় নিখরচায় চিকিৎসা, কাজে যেতে না-পারলেও বেতন, দুর্ঘটনায় কাজের ক্ষমতা হারালে ক্ষতিপূরণের মতো নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পান। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এর ফলে ওই কম রোজগেরে মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে টাকার অঙ্ক কমানোর ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের কাছে আর্জি জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশ।
গত বছর ১ জুলাই থেকে ইএসআই প্রকল্পে কর্মী এবং নিয়োগকারীর দেয় টাকা কমানো হয়েছে। ফলে গত (২০১৯-২০) অর্থবর্ষের শেষ ন’মাসে নিগমের আয় কমেছে ৫৫৩৪ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই থেকে এক বছরের হিসেব ধরলে আয়ের ঘাটতি প্রায় ৭৪০০ কোটি। অথচ ইএসআইয়ের সূত্রেরই খবর, গত অর্থবর্ষে সদস্যদের স্বাস্থ্য পরিষেবা-সহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার খরচ আগের বছরের থেকে বেড়েছে ১৪৩৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: প্রত্যাহার নয় আইন, অনড় কেন্দ্র
আরও পড়ুন: কী ভাবে টিকা ফ্রন্টলাইন কর্মীদের, বৈঠকে মন্ত্রক
ইএসআই পরিচালন পর্ষদের শ্রমিক প্রতিনিধি সদস্য এবং এআইইউটিইউসির সভাপতি শঙ্কর সাহার দাবি, পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সদস্যদের স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার খরচের মাথা তোলাই স্বাভাবিক। ফলে নিগমের আয় কমলে সেই সব পরিষেবাও ব্যাহত হবে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মাসিক জমা কমায় লাভবান হচ্ছে নিয়োগকারী বা মালিকপক্ষ। কর্মীদের দেয় টাকাও কমেছে ঠিকই। কিন্তু তাঁরা যে সমস্ত অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি সুযোগ-সুবিধা পান, সেটাও তো ধাক্কা খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আখেরে ক্ষতি তাঁদেরই।’’
প্রকল্পে সুবিধার তালিকা
• কর্মী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিখরচায় সব ধরনের চিকিৎসা। প্রয়োজনে চিকিৎসা করানো যাবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও।
• কর্মী অসুস্থ হয়ে বাড়িতে থাকার জন্য বেতন কাটা গেলে মেলে ক্ষতিপূরণ।
• কাজের জায়গায় দুর্ঘটনার ফলে কর্মক্ষমতা হারালে নির্দিষ্ট হারে মাসিক আর্থিক সুবিধা।
• মহিলা কর্মীদের প্রসবের খরচ (মেটারনিটি বেনিফিট)।
• কাজের সময়ে দুর্ঘটনায় কর্মী মারা গেলে নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যেদের মাসিক আর্থিক এবং চিকিৎসার সুবিধা।
• চাকরিতে থাকাকালীন কর্মী মারা গেলে শেষকৃত্যের যাবতীয় খরচ পায় পরিবার। কাজের জায়গায় দুর্ঘটনার কারণে কর্মক্ষমতা পুরোপুরি হারালে, অবসরের বয়সের পরে মারা গেলেও ওই খরচ পায় তাঁর পরিবার।
ইএসআইয়ের এক কর্তাও কবুল করেছেন, ‘‘আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক বাড়ায় এই মুহূর্তে পরিষেবা দিতে সমস্যা না-হলেও, ভবিষ্যতে তা ব্যাহত হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশের তোপ, কেন্দ্র প্রকল্পটি সত্যিই কতটা চালু রাখতে চায়, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। শঙ্করবাবু জানান, ইতিমধ্যেই সরকার এই প্রকল্পে কর্মীদের বাধ্যতামূক ভাবে শামিল না-করার জন্য বিকল্প প্রস্তাবের গাওনা গেয়ে রেখেছে। যদিও তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে তা এখনও কার্যকর হয়নি।
আগে ইএসআই প্রকল্পের খাতে কর্মীকে মাসে বেতনের ১.৭৫% টাকা দিতে হত। নিয়োগকারীকে ৪.৭৫%। যা কমিয়ে করা হয়েছে যথাক্রমে ০.৭৫% এবং ৩.২৫%। অভিযোগ, এই প্রকল্পের একমাত্র আয়ের উৎস ওই জমা। রাজ্য বা কেন্দ্র, কেউই ওই প্রকল্পে টাকা দেয় না। ফলে আয় কমছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, বিষয়টি নিয়ে শ্রম মন্ত্রকের তরফে অবিলম্বে পদক্ষেপ করা না-হলে আয়-ব্যয়ের ফারাক আরও বাড়বে। তখন কমাতে হবে পরিষেবা। সে ক্ষেত্রে সুরক্ষার ছাতা নিয়ে কম আয়ের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হবে সরকারের।