কুমার মঙ্গলম বিড়লা। —ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগে সামনে এসেছিল ভোডাফোন আইডিয়ায় (ভিআই) কুমার মঙ্গলম বিড়লার ২৭% অংশীদারি ছাড়তে চাওয়ার খবর। যা জানিয়ে গত জুনে ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবাকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। তুলে ধরেছিলেন টেলিকম সংস্থাটির বেহাল আর্থিক দশার কথা। আর বুধবার ভিআই-এর পর্ষদ থেকে সরেই গেলেন। নন-এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান এবং নন-এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর পদ থেকে বিড়লার সরে যাওয়ার আর্জি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানাল সংস্থার পরিচালন পর্ষদ।
মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে এই দুই খবরে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়ল বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। যা শুধু ২৭ কোটির বেশি গ্রাহকের মধ্যে নয়, কাঁপুনি ধরিয়েছে ব্যাঙ্কিং শিল্পেও। কারণ, শেষ পর্যন্ত ভোডাফোন ঝাঁপ বন্ধ করলে তাদের বিপুল ঋণ পরিণত হতে পারে অনুৎপাদক সম্পদে। যা ব্যাঙ্কের সঙ্কট বাড়াবে। পরিস্থিতি উদ্বেগের বলে জানিয়ে সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও এস এস মল্লিকার্জুন রাও। প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চের হিসেবে লিজ়ের দায় বাদে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম বাবদ খরচ, ঋণ মিলিয়ে ভোডাফোনের বকেয়া প্রায় ১.৮ লক্ষ কোটি টাকা।
এ দিন ভোডাফোন জানিয়েছে, কুমার মঙ্গলম সরার পরে আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে নন-এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান হয়েছেন হিমাংশু কাপানিয়া। যিনি বর্তমানে নন-এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর। এই গোষ্ঠীরই আর এক প্রতিনিধি সুশীল আগরওয়ালকে অতিরিক্ত ডিরেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে।
জুনে কেন্দ্রকে লেখা চিঠিতে কুমার মঙ্গলম স্পষ্টই বলেছিলেন, জুলাইয়ের মধ্যে সক্রিয় সরকারি সাহায্য না-পেলে তাঁর পক্ষে টেলিকম ব্যবসা চালানো কার্যত অসম্ভব। লগ্নিকারীরা টাকা ঢালতে রাজি নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, দেশের শিল্পপতিদের অন্যতম মুখ বিড়লার ওই চিঠি এবং এ দিন পর্ষদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত টেলি শিল্পের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে তো দাঁড় করাবেই, সামগ্রিক ভাবে দেশে ব্যবসার পরিবেশ নিয়েও সংশয় তৈরি হতে পারে লগ্নিকারীদের মনে। একাংশের দাবি, সার্বিক সঙ্কটের আঁচ এড়াতে পারবেন না কুমার মঙ্গলমও। তাই এ ভাবে আগাম বার্তা দিতে চাইলেন তিনি। প্রসঙ্গত, তাঁর চিঠির কথা সামনে আসার পর থেকেই টানা পড়ছে সংস্থাটির শেয়ার দর। বুধবার তা নেমেছে সাড়ে ১৮ শতাংশেরও বেশি।
তার উপরে সরকারের তরফ থেকে ভোডাফোন কোনও সুরাহা পাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে দেশের টেলিকম ক্ষেত্র এখন অজানা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। বিষয়টি যে কতটা উদ্বেগের সেই ইঙ্গিত মিলেছে এ দিন ভারতী এয়ারটেলের এমডি-সিইও গোপাল ভিত্তলের মন্তব্যেও। ১৩০ কোটির দেশে অন্তত তিনটি বেসরকারি টেলি সংস্থা থাকার পক্ষে সওয়াল করে সরকারকে সাহায্যের জন্য দরবার করেছেন তিনি। টেলিকমে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ রাখতে অন্তত তিনটি সংস্থা যে জরুরি তা বলেছিলেন এয়ারটেল কর্ণধার সুনীল মিত্তলও।