Unorganized Labours

মাথায় থাকুক অসংগঠিত ক্ষেত্রের সদস্যদের ভবিষ্যৎ

প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি কিংবা পেনশনের সুবিধার থেকে বহু দূরে রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সরকারের তরফে এঁদের জন্য হাতে গোনা কিছু প্রকল্প আনা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

ভারতের বিপুল জনসংখ্যার বড় একটি অংশ এখনও অবসর জীবনের আর্থিক সংস্থান বা সুরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে। এই শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী, ছোট দোকানদার ও তাঁদের কর্মচারীরা, হকার, কৃষক, ট্যাক্সি-অটো-টোটোচালক এবং স্বনির্ভর মানুষদের বৃহত্তর অংশ। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি কিংবা পেনশনের সুবিধার থেকে বহু দূরে রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। সরকারের তরফে এঁদের জন্য হাতে গোনা কিছু প্রকল্প আনা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। প্রকল্পগুলির সেই ভাবে প্রচার কিংবা বিপণনও করা হয় না। অথচ দৈনন্দিন খরচের পাশাপাশি ওষুধ এবং চিকিৎসা বাবদ ব্যয়ের তহবিল এবং নিয়মিত কিছু আয় থাকা তাঁদের জন্য জরুরি। যদিও অধিকাংশের তা নেই। এই কারণে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অনেক আগে থেকেই আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি এই শ্রেণির মানুষদের। ক্ষমতা অনুযায়ী ছোট আকারে হলেও। কোন কোন প্রকল্পের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে, তা নিয়েই আজ সংক্ষেপে আলোচনা করব।

Advertisement

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ): বড় মেয়াদে নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করার জন্য এই প্রকল্পের জুড়ি নেই। এর মেয়াদ ১৫ বছর হলেও সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে প্রত্যেক বার পাঁচ বছর করে তা বাড়ানো যায়। সুদের হারও বেশ ভাল। এখন ৭.১%। এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল, এই সুদ পুরোপুরি করমুক্ত। ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুদে-আসলে মূল পুঁজি অনেকটাই বেড়ে ওঠে। এখানে বছরে কমপক্ষে ৫০০ টাকা এবং সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যায়। এই জমায় আয়কর ব্যবস্থার পুরনো কাঠামোতে ৮০সি ধারায় কর ছাড়ও মেলে।

ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (এনপিএস): কেন্দ্রীয় সরকার স্থাপিত এই পেনশন প্রকল্পে অল্প অল্প করে নিয়মিত টাকা জমিয়ে বড় মেয়াদে নিজেই নিজের পেনশনের ব্যবস্থা করে নেওয়া যেতে পারে। অ্যাকাউন্ট খুলতে লাগে মাত্র ৫০০ টাকা। বছরে কমপক্ষে ১০০০ টাকা জমা দিতে হয়। এই টাকা যেহেতু গ্রাহকদের পছন্দ অনুযায়ী শেয়ার, সরকারি ও বেসরকারি ঋণপত্রে (বন্ড) খাটানো হয়, সে কারণে ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় রিটার্ন অনেকটাই ভাল। লগ্নি এবং অবসরের সময়ে প্রাপ্য টাকার উপরে রয়েছে আকর্ষণীয় কর ছাড়ের সুবিধাও। অবসরের সময়ে বেড়ে ওঠা তহবিলের ৬০% পর্যন্ত তুলে নেওয়া যায়। বাকি ৪০% দিয়ে কিনতে হয় অ্যানুইটি প্রকল্প। তার থেকে নিয়মিত পেনশন মেলে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং অন্য কয়েকটি সংস্থার মাধ্যমে এনপিএস অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

Advertisement

অটল পেনশন যোজনা: এনপিএস ছাড়া কম আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে ভারত সরকারের অটল পেনশন যোজনা। এই প্রকল্প থেকে মাসে ন্যূনতম ১০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পেনশন পাওয়া যেতে পারে। যোগ দেওয়া যায় ১৮-৪০ বছর বয়সের মধ্যে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। আয়করদাতারা এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারবেন না। এনপিএস এবং অটল পেনশন যোজনা ছাড়া বিভিন্ন বিমা সংস্থা এবং মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থারও পেনশন প্রকল্প রয়েছে।

মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি: সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপির মাধ্যমে বড় মেয়াদে ছোট ছোট লগ্নি করে নিজের গ্র্যাচুইটির তহবিল গড়ে তোলা যায়। সুবিন্যস্ত এক বা একাধিক ফান্ডে লগ্নি করে যেতে হবে প্রত্যেক মাসে। ন্যূনতম ৫০০ টাকা করে। লগ্নির মেয়াদ যত বড় হবে রিটার্ন এবং তহবিলের আকারও তত বড় হবে। অতীত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ভাল একুইটি ফান্ডে বড় মেয়াদে বার্ষিক ১৫% এবং হাইব্রিড ফান্ডে ১২% পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে। অল্প করে নিয়মিত জমালে লম্বা মেয়াদে তা এক বড় তহবিল গড়ে দিতে পারে।

মাথায় রাখতে হবে—

  • অল্প করে হলেও বড় মেয়াদে নিয়মিত টাকা জমাতে হবে।
  • শুরুতে ছোট অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করলেও পরে তা বাড়ানোর কথা ভাবতে হবে।
  • মাঝপথে প্রকল্প বন্ধ করা যাবে না। মাসিক জমাকে আবশ্যিক খরচের মর্যাদা দিতে হবে।
  • করিয়ে রাখতে হবে সরকারি স্বাস্থ্য বিমা এবং দুর্ঘটনা বিমা।
  • অনাবশ্যক খরচ না করে সঞ্চয় বাড়াতে হবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement