savings

প্রথম লক্ষ্য কম খরচ, সঞ্চয়

রোজগার কম। লড়াইটাই আসল মূলধন। তা দিয়েই ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে হবে মজবুত আর্থিক ভিত। তার জন্য সতর্ক হতে হবে খরচের ব্যাপারে। আর মন দিতে হবে সঞ্চয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:৪১
Share:

পরিচিতি: সোমনাথ (৩৫)

Advertisement

কী করেন: অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী। ইএসআই আছে। স্ত্রী, পুত্র, ভাইকে নিয়ে পরিবার। ছেলে প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। ভাই রোজগার শুরু করেছেন। জেলা শহরে নিজেদের বাড়ি।

লক্ষ্য: ভবিষ্যতের জন্য তহবিল। ছেলের পড়াশোনা। আলাদা স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজন আছে কি?

Advertisement

বিন্দুতে সিন্ধু। কথার কথা নয়। বাস্তব। সোমনাথ অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী। রোজগার অল্প। পেনশনের প্রশ্নই ওঠে না। এই আয়েই বেশ কয়েক বছর ধরে চার জনের পরিবার চালাচ্ছেন। অর্থাৎ, পরিচয় না-থাকলেও একটা ব্যাপার স্পষ্ট যে সোমনাথ এক জন লড়াকু মানুষ। সেই লড়াইয়ের ফলেই ভবিষ্যতে তাঁর রোজগার বাড়বে। সফল হবে স্বপ্নও।

তবে শুরুতে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সোমনাথের ভাই সদ্য রোজগার শুরু করেছেন। এক দিন তাঁর রোজগারও বাড়বে। কিন্তু পুরোদস্তুর সংসার তৈরি হবে তাঁরও। তাই সংসার খরচের চাপ অদূর ভবিষ্যতে যদিও বা কমে, পরে তা আবার বাড়বে। তাই সংসারকে পোক্ত আর্থিক ভিতের উপরে দাঁড় করাতে হলে প্রথমেই দু’টি সিদ্ধান্ত নিতে হবে সোমনাথকে। এক, হিসেব কষে গুনে গুনে খরচ। দুই, উদ্বৃত্তের পুরোটাই সঞ্চয়। একেবারে পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনারই একটা রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করেছি। যাতে সোমনাথ বা তাঁর মতো আয় যাঁদের, তাঁরা সেটা মেনে চললে এবং প্রয়োজন মাফিক বাস্তব বুদ্ধি প্রয়োগ করলে ভবিষ্যৎ কিছুটা মসৃণ হয়।

কী ভাবে খরচ

শুধু সোমনাথ নয়। খরচের হিসেব কষা জরুরি খেটে খাওয়া প্রতিটি মানুষের। আর খরচের হিসেব মানে প্রত্যেকটি খরচের। খাতায় প্রতিটি খরচের হিসেব লিখুন। চেষ্টা করুন বুঝতে কোন খরচটা অত্যাবশ্যক আর কোনটা অতিরিক্ত। মাসের শেষে সারা মাসের খরচ খতিয়ে দেখলেই বুঝবেন, কোন খাতে খরচ কমানো যায়। সোমনাথবাবুর খরচের হিসেব দেখে আমার মনে হয়েছে, তিনি বেহিসাবি খরচ তেমন করেন না। তা সত্ত্বেও তাঁকে পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখতে বলব। তাতে সামান্য হলেও খরচ কমে। সঞ্চয়ের জন্য হাতে টাকা থাকে কিছুটা বেশি। সুবিধা হয় সঞ্চয় এবং লগ্নির পরিকল্পনা তৈরি করতে।

হঠাৎ প্রয়োজনে

আমরা সব সময়ে বলি আপৎকালীন খরচের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন থেকে ছ’মাসের বেতনের টাকা রেখে দেওয়া জরুরি। সেভিংস অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে বা কোনও মেয়াদি আমানত আছে কি না, সেটা সোমনাথ জানাননি। তবে ধরে নেওয়া যায় তা সামান্য। আমার পরামর্শ, তিনি এখনই ব্যাঙ্কে এক বছরের জন্য একটি রেকারিং অ্যাকাউন্ট চালু করুন। প্রতি মাসে তাতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা রাখুন। মেয়াদের শেষে সেটিকে রিনিউ করান। এই পথে হাঁটলে ধীরে ধীরে ভাল অঙ্কের একটি তহবিল তৈরি হবে।

আসলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিপদের সময়ে বিশেষ করে কম রোজগেরে মানুষদের বাধ্য হয়েই নিজেদের সঞ্চয়ে হাত দিতে হয়। ভাঙিয়ে ফেলতে হয় সঞ্চয় প্রকল্প। সেটা আটকাতেই অল্প অল্প করে গড়ে তোলা উচিত এই তহবিল।

বিমা

সোমনাথের দু’টি জীবন বিমা পলিসি। এনডাওমেন্ট প্ল্যান। তবে আমার মতে, এনডাওমেন্ট কিংবা ইউলিপ প্ল্যানের কোনওটাই তাঁর পক্ষে ঠিক নয়। কম রিটার্নের বিমায় নগদ আটকে থাকা সীমিত রোজগারের মানুষের জন্য ঠিক নয়। আর বিমামূল্য তো নিতান্তই কম। সোমনাথের উচিত অন্তত ১০ লক্ষ টাকার একটি টার্ম পলিসি কেনা। সঙ্গে পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্ট রাইডার। এখন প্রিমিয়াম দিতে যে টাকা খরচ হচ্ছে তার চেয়ে অনেক সস্তায় হয়ে যাবে। পরিবারকেও রাখা যাবে অনেক বেশি সুরক্ষিত। বাকি দু’টি পলিসি পেড আপ করে দেওয়া উচিত। এর ফলে হাতে যে অতিরিক্ত টাকা থাকবে, তা অন্য ভাবে সঞ্চয় করতে পারবেন তিনি।

সোমনাথ ইএসআইয়ের সুবিধা পান। তবে ভবিষ্যতে নিজের এবং পরিবারের জন্য একটি স্বাস্থ্য বিমা অবশ্যই তাঁর লাগবে। কিছু সময় পরে ক্ষমতা অনুযায়ী একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার মেডিক্লেম তাঁর কেনা উচিত।

পড়াশোনার খরচ

রোজগার অনুযায়ী সন্তানের শিক্ষার পিছনে খরচ দেখে বোঝা যায়, তাকে শক্তপোক্ত ভিতের উপরে দাঁড় করাতে সোমনাথ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই ধীরে ধীরে এই খরচ বাড়বে। প্রাথমিক স্তরে এক রকম, মধ্যশিক্ষায় আরও বেশি, আর উচ্চশিক্ষায় তো আরও। সন্তান মেধার জোরে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুবিধা পেলে তো কথাই নেই। কিন্তু যদি তা না পায়? তার জন্য সব রকম অবস্থার কথা মাথায় রেখে সঞ্চয় করতে হবে। আজ থেকেই।

পোস্ট অফিসে রেকারিং আছে। ছেলের পড়াশোনার জন্যই সেটা চালানো উচিত। সেই সঙ্গে এসআইপি-ও। তবে ফান্ড নির্বাচনের আগে সোমনাথের একটু ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যেহেতু রোজগার কম, তাই উচিত কম ঝুঁকির ফান্ডে টাকা রাখা। এই ধরনের ফান্ডে টাকা রাখলে ভাল হয়:

• শর্ট টার্ম ডেট ফান্ড।

• ডায়নামিক ইকুইটি ফান্ড।

• ব্যালান্সড ফান্ড।

• ইনডেক্স ফান্ড।

সম্ভব হলে একাধিক ফান্ডে মিলিয়ে মিশিয়ে টাকা রাখুন। আস্তে আস্তে লগ্নির অঙ্ক বাড়ান। কোনও পরিস্থিতিতেই যেন ওই টাকা তুলতে না-হয়। ডাকঘর রেকারিং, এসআইপি থাকুক ছেলের শিক্ষার জন্য।

অবসরের জন্য

সোমনাথ প্রভিডেন্ট ফান্ডে নথিভুক্ত কি না, তা আমরা জানি না। হলে ভাল। না-হলে এখনই উচিত ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা। এমনকি, পিএফের গ্রাহক হলেও পিপিএফ খোলা যায়। সুদ কমলেও দীর্ঘমেয়াদের জন্য আজও এটি অত্যন্ত শক্তিশালী লগ্নি প্রকল্প। সোমনাথের চেষ্টা করা উচিত প্রত্যেক মাসে উদ্বৃত্ত কিছু টাকা সেখানে রেখে দেওয়া। সে যত অল্পই হোক। ব্যাঙ্কে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুললে অনলাইনে টাকা ট্রান্সফার করা যায়। এর পাশাপাশি, ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে একটি দীর্ঘমেয়াদি এসআইপি করলে ভাল হয়। তবে তা এখনই করতে বলছি না। রোজগার আরও বাড়লে তা করা যাবে।

মাথায় রাখুন সকলেই

কী ভাবে খরচ বাঁচাতে এবং সঞ্চয় করতে হবে তার একটা পরিকল্পনা তৈরি করা হল। তবে কোন খাতে কত টাকা রাখা উচিত, তার উল্লেখ করলাম না। কারণ, সোমনাথের রোজগার এখন সীমিত। সেখান থেকে খরচের পরে উদ্বৃত্ত টাকা বিভিন্ন প্রকল্পে ভাগ করে রাখতে হবে তাঁকে। পরে রোজগার বাড়লে সেই অনুযায়ী বাড়াতে হবে সঞ্চয়। তবে উপার্জন বাড়লেও যেন খরচ এখনকার তুলনায় বিশেষ না-বাড়ে।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement