ফাইল চিত্র।
সকাল থেকে চায়ের কাপে ঝড় তুলছে একটা প্রশ্ন— এলআইসিতে টাকা রাখা নিরাপদ তো!
মোদী জমানায় লোকসানে বিপর্যস্ত আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতে এলআইসিকে (জীবন বিমা নিগম) কাজে লাগানো হয়েছিল। এ বার আবাসন শিল্পকে বাঁচানোর তহবিল গড়তেও স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে টাকা ঢালবে তারা। ফলে উঠছে প্রশ্ন, আবাসন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে এলআইসি যে টাকা ধার দেবে, তা শোধ না হলে কী হবে? সংস্থার পলিসি গ্রাহকদের চিন্তার কারণ নেই তো?
বিরোধীদের তোপ, এই সরকারি জীবন বিমা সংস্থায় আমজনতা টাকা রাখেন নিরাপদ মনে করে। একের পর এক দুরবস্থা সামাল দিতে তাকেই এগিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত পুঁজিকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে কেন? অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, বিপদের কারণ নেই। আবাসন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ধার দেওয়া হবে। পুরোটাই সুদ-সহ ফিরবে। অর্থসচিব অতনু চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘যে প্রকল্পগুলি লাভজনক, সেখানেই ধার দেওয়া হবে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, প্রোমোটারেরা ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের থেকে সিংহভাগ টাকা পেয়েও কাজ শেষ করতে পারছিলেন না। তা হলে কাজ শেষ করতে তহবিল থেকে ধার নিয়ে তা শোধ করবেন কোথা থেকে?
আর্থিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ বিবেক কল বলেন, ‘‘যাঁরা এলআইসিতে টাকা রাখেন, তাঁরা শেয়ার বা ফান্ডে লগ্নিতে সড়গড় নন। তাই সেখানে বিমা করে নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু সেই সংস্থার টাকা কেন্দ্র আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে কাজে লাগিয়েছে। এখন ধুঁকতে থাকা আবাসন ক্ষেত্রকে উদ্ধারে লাগাচ্ছে। আগের সরকারও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণে এলআইসিকে দিয়ে শেয়ার কিনিয়েছে। তবে এই সরকার তা নির্লজ্জ ভাবে করছে।’’
উঠছে প্রশ্ন
• আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে বাঁচিয়েছে এলআইসি। আবাসনকে বাঁচাতেও তাদের টানা হল কেন?
•এলআইসির দেওয়া ধার শোধ না হলে?
• সকলকে বাঁচাতে গিয়ে শেষে তাদের লাভে টান পড়বে না তো?
• এলআইসি গ্রাহকদের পুঁজি নিরাপদ তো?
• যাঁরা সুরক্ষিত হতে এই সংস্থার শরণাপন্ন হন, তাঁদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কি ঠিক?
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের দাবি, টাকা রাখা বিপজ্জনক নয় এলআইসিতে। এখনও জীবন বিমায় প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ৭১% সংস্থার ঘরে আসে তাদের। বার্ষিক প্রিমিয়াম বাবদ আয় প্রায় ৩ লক্ষ কোটি। প্রায় ৩০ লক্ষ কোটির ব্যালান্স-শিট নিয়ে বছরে ২-২.৫ লক্ষ কোটি টাকা যেখানে খুশি ঢালতে পারে। তার মধ্যে বিপন্নদের বাঁচানোর এই খরচ খুবই সামান্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, লগ্নি থেকে সংস্থার যা আয় এবং তা থেকে পলিসি গ্রাহকদের তারা যা ফেরাচ্ছে, তা কতটা লাভজনক হিসেব করা উচিত।
এলআইসি টাকা সরকারি ঋণপত্রে খাটায়। ইউপিএ আমলে ২০১০ সালেও ওএনজিসির প্রথম বিলগ্নিকরণে ক্রেতা না মেলায় ১২,০০০ কোটিতে তাদের বাজারে আসা শেয়ারের ৯৫% কিনতে হয়। প্রশ্ন ওঠে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারি মালিকানা অন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছে বিক্রি কি বিলগ্নিকরণ? গত ১০ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় এলআইসির লগ্নি চার =গুণ বেড়েছে। গত মার্চে তা ২২.৪ লক্ষ কোটি। বেসরকারি ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ কোটি। মোদী আমলেও ২০১৫ সালে কোল ইন্ডিয়ার বিলগ্নিতে তারা ১০ হাজার কোটি ঢালে। আইডিবিআই ব্যাঙ্ক বাঁচাতে ২০ হাজার কোটি। এতে এলআইসির আদৌ লাভ হবে কি, প্রশ্ন থাকছেই।