প্রতীকী চিত্র।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, এখনও ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর পরিস্থিতি আসেনি। যেখানে আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হার চড়বে। কিন্তু তার আশঙ্কা রয়েছে। সাবধান থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাঁর চিন্তার কারণ ছিল, একবার দেশের অর্থনীতি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর জাঁতাকলে পড়লে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।
বৃহস্পতিবার খোদ সরকারি পরিসংখ্যানই জানিয়েছে, এক দিকে নভেম্বরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ৫.৫৪%। অন্য দিকে, অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন ৩.৮% কমেছে। এর আগে জুলাই-সেপ্টেম্বরের বৃদ্ধির হারও নেমেছে ৪.৫ শতাংশে। যা ৬ বছরে সর্বনিম্ন। তার পরেই অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশের অর্থনীতি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর জাঁতাকলে ঢুকে পড়েছে কি না, তা নিয়ে!
আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যার জবাবে বলেন, ‘‘শুনছি এমনটা বলা হচ্ছে। আমার কিছু বলার নেই।’’ তবে কেরলের অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক টমাসের যুক্তি, ‘‘এটা অবশ্যই স্ট্যাগফ্লেশন। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন ৩.৮% কমেছে। মূলধনী পণ্য উৎপাদন ২২% কমেছে। যার অর্থ, লগ্নিও কমছে। এ দিকে খুচরো বাজারদর ৫.৫% ছুঁয়েছে।’’
কী এই ‘স্ট্যাগফ্লেশন’?
আমেরিকার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল স্যামুয়েলসন বলেছিলেন, একই সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি চড়তে থাকা ও আর্থিক বৃদ্ধি কমে যাওয়ার ফলে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার নামই স্ট্যাগফ্লেশন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে আমেরিকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মনমোহন এ নিয়েই সতর্ক করে বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতিতে কেনাকাটা কমেছে। মানুষের সঞ্চয় কমছে। এ দিকে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এর পরে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর বিপদ বাড়বে। একবার এই দুষ্টচক্রে পড়লে বড় মাপের অর্থনীতির উদ্ধার পাওয়া কঠিন।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি এখন ৪০ মাসে সব থেকে চড়া। ফলে কমানোর বদলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের রেপো রেট বাড়াতে শুরু করবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ এন আর ভানুমূর্তির যুক্তি, ‘‘স্ট্যাগফ্লেশনের সমস্ত লক্ষণ দেখা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এখনই তা নিশ্চিত করে বলা ঠিক নয়। কারণ এই চড়া মূল্যবৃদ্ধি মরসুমি কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলেও হতে পারে। ডিসেম্বরের বাজারদর দেখতে হবে। সেখানেও একই অবস্থা থাকলে বলতে হবে আমরা স্ট্যাগফ্লেশনের বিপজ্জনক বৃত্তে ঢুকে পড়েছি।’’
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর তোপ, ‘‘আমাদের সব থেকে বড় শক্তি ছিল অর্থনীতি। রঘুরাম রাজন (প্রাক্তন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর) দেখা করে বলেছিলেন, আমেরিকা, ইউরোপে ভারতের কোনও কথাই হচ্ছে না। হলেও অর্থনীতির কথা হয় না। অত্যাচার, বিভাজন, হিংসা— এ সব বিষয়ে কথা হয়। নরেন্দ্র মোদীকে জবাব দিতে হবে, উনি অর্থনীতি কেন নষ্ট করেছেন? যুবকদের রোজগার কেন কেড়ে নিয়েছেন!’’