Gautam Adani

বাজেটের আগে আদানি কাণ্ডে উদ্বেগে লগ্নিকারীরা

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি এবং আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৯
Share:

গৌতম আদানি। — ফাইল চিত্র।

গোটা দেশ যখন বুধবার পেশ হতে চলা কেন্দ্রীয় বাজেটের অপেক্ষায়, ঠিক তখনই সমস্ত মানুষের নজর কেড়ে নিল আদানি কাণ্ড!

Advertisement

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপি এবং আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলেছে আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। করোনাকালে অতি দ্রুত শেয়ার সম্পদ বেড়ে ওঠা আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ার দরের পতন শুরু হয়েছে তার পর থেকেই। সেই আতঙ্ক গোটা বাজারকে টেনে নামিয়েছে। মাত্র দু’দিনে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের লগ্নিকারীরা হারিয়েছেন ৪.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ১৬৪৮ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স চলে এসেছে ৫৯,৩৩১ অঙ্কে। অভিযোগের সারবত্তা থাকলে এর ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে। দেশের অর্থনীতির পক্ষেও এটি উদ্বেগের ব্যাপার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যা হতে পারে—

 আদানিদের বিভিন্ন সংস্থায় বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক। সংস্থাগুলির দুর্বলতা প্রকাশ পেলে তা বড় মাথাব্যথার কারণ হবে ব্যাঙ্কগুলির কাছে। এই কারণে সপ্তাহের শেষ দু’দিনে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার পড়েছে।

Advertisement

 আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে মোটা লগ্নি রয়েছে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বেশ কয়েকটি বড় সংস্থার। দরে পতন রোখা না-গেলে তারাও চাপে পড়তে পারে। লোকসানের কবলে পড়তে পারেন গোষ্ঠীর সাধারণ লগ্নিকারীরাও।

 গোষ্ঠীর সংস্থাগুলিতে লগ্নি রয়েছে কয়েকটি মিউচুয়াল ফান্ডেরও। ইতিমধ্যে সেগুলির ইউনিটের দামে (ন্যাভ) বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পতন মাত্র ক’দিন চললেও শেয়ার ও ফান্ডের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরতে পারে।

 অভিযোগ আংশিক প্রমাণিত হলেও সংস্থা পরিচালনা (কর্পোরেট গভর্ন্যান্স) এবং বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলি সরব হয়েছে। এই গুরুতর অভিযোগ উপেক্ষা করতে পারবে না সরকারও। যদিও অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে নিজেদের দাবির সত্যতা প্রতিষ্ঠার দায়ও তাদের কাঁধে পড়বে।

 দায় এড়াতে পারবে না অডিট সংস্থাগুলিও।

 ভারতীয় সংস্থার প্রতি আস্থায় চিড় ধরতে পারে বিদেশি লগ্নিকারীদের।

ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৫ দিন দেশের অর্থনীতি ও বাজারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বুধবার বাজেট। বিভিন্ন আশা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। সেই সন্ধ্যাতেই আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের সুদ সিদ্ধান্ত জানা যাবে। ৬-৮ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসবে দেশে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি। ১৩ ফেব্রুয়ারি জানা যাবে জানুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। ফেব্রুয়ারির মাঝমাঝি সময়ে প্রকাশিত হয়ে যাবে গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে সংস্থাগুলির অধিকাংশের আর্থিক ফল। আদানি কাণ্ডের জল কত দূর গড়ায়, তত দিনে তা-ও স্পষ্ট হয়ে যাবে অনেকটা।

অর্থাৎ, আগামী মাসের প্রথমার্ধ থাকবে তথ্যে ঠাসা। আর সব তথ্যেরই কম-বেশি প্রভাব থাকবে শেয়ার বাজারের উপরে। আগামী দিনে তার গতিবিধি কী হয় সেটাই এখন দেখার।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement