প্রতীকী ছবি।
শেয়ার বাজার এখন যথেষ্ট উঁচুতে। করোনার মধ্যেই সূচকের দৌড় ৫০ হাজার পেরিয়েও বহাল থাকায় বহু লগ্নিকারীর ঝুলি ভরেছে। কিন্তু যে হারে খাদ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, তাতে স্বস্তি উধাও তাঁদের। চিন্তিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। কারণ, লাগামছাড়া ভাবে চড়ছে তেলের দর। যা ঠেলে তুলছে পণ্যের দামকে। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ। ফলে দিশেহারা সাধারণ মানুষ, যাঁদের অনেকেরই কোভিডকালে হয় কাজ গিয়েছে নয়তো আয় কমেছে। লগ্নিকারীদের এখন চিন্তা, মূল্যবৃদ্ধি বেলাগাম হলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ আটকে যেতে পারে। তখন সূচক ফের তলিয়ে যাবে না তো?
সব মহলেই ক্ষীণ আশা ছিল, পেট্রল ১০০ টাকা পার করলে কেন্দ্র হয়তো দামে রাশ টানতে পদক্ষেপ করবে। কিন্তু বাস্তবে তেলমন্ত্রীর পরিবর্তন ছাড়া কিছু হয়নি। উল্টে দর আরও চড়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় (লিটারে) ১০১ ‘নট আউট’। মুম্বইতে ১০৭ টাকা। সেঞ্চুরির পথে ডিজেল। দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাস, দুধ-সহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও। মূল্যবৃদ্ধি যে ভাবে মাথা তুলছে, তাতে সুদ বাড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
অনেকটা এরই প্রভাবে বন্ড ইল্ড বাড়তে বাড়তে গত সপ্তাহে পৌঁছেছে ৬.১৮ শতাংশে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ইল্ডকে ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। বন্ড ইল্ড বাড়লে বাজার থেকে নেওয়া ঋণে সুদ বাবদ সরকারের খরচ বাড়বে। অর্থাৎ পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কাঁটা বিঁধছে অনেকগুলি জরুরি বিষয়কেই। বিরোধীরা বলছেন, পেট্রল-ডিজেলের দাম বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দরের সঙ্গে সম্পর্ক-যুক্ত হলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের সময়ে দেশে তেলের দাম থমকে ছিল কী করে? এমনকি কমেওছিল অল্প বিস্তর। সংশ্লিষ্ট মহলে অনেকেরই সন্দেহ, ত্রাণ বাবদ বাড়তি খরচের বড় অংশ তেলের শুল্ক হিসেবে আমজনতার থেকেই তুলছে সরকার।
গত সপ্তাহে সেনসেক্স প্রথমবার ৫৩,০০০ পেরিয়ে থামে। তবে বাজারের দুর্বলতা চোখ এড়ায়নি। আট মাস পরে জুনে জিএসটি সংগ্রহ-ও ১ লক্ষ কোটি টাকার কম (৯২,৮৪৯ কোটি টাকা) হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিকে কতটা আঘাত করেছে এই তথ্য থেকে তা স্পষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে সূচক তেজী থাকতে থাকতে বাজারে প্রথম শেয়ার ছেড়ে (আইপিও/নতুন ইসু) বড় মাপের মূলধন তুলে নিতে চাইছে বহু সংস্থা। জুনে ৫টি সংস্থার আইপিও এসেছিল। জুলাইয়ে আসার কথা ১১টির। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের পরে এক মাসে এতগুলি বাজারে আসেনি। এর মধ্যে অন্যতম জোম্যাটো (লক্ষ্য ৯৩৭৫ কোটি টাকা তোলা), গ্লেনমার্ক লাইফ সায়েন্সেস (১৮০০ কোটি), ক্লিন সায়েন্স (১৫০০ কোটি টাকা)।
বড় অঙ্কের আইপিও আনার পথে এগোচ্ছে এলআইসি এবং পেটিএম-ও। এ বার কেন্দ্রের বিলগ্নির লক্ষ্য ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই হয়তো আসবে এলআইসি-র ইসু মারফত। এই জীবন বিমা সংস্থার অনুমোদিত মূলধন স্থির হয়েছে ২৫,০০০ কোটি। বাজারে ছাড়া শেয়ারের ১০% রাখা হতে পারে পলিসি-গ্রাহকদের জন্য। তবে শেয়ার বিক্রির পরেও সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্রের হাতেই। মন্ত্রিসভার সায় পেলে মার্চের মধ্যেই হয়তো এই ইসুকে বাজারে দেখা যাবে। পাশাপাশি আর একটি বড় ইসু আনতে প্রস্তুত হচ্ছে পেটিএম, যার আয়তন হাতে পারে ১৭০০০ কোটি টাকার আশেপাশে।
(মতামত ব্যক্তিগত)