ব্যাঙ্ক ঋণ ও জমায় আরও সুদ বাড়বে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে ৩-৫ এপ্রিলের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বৈঠকে। ফাইল ছবি।
চড়া সুদের জমানায় পা রেখেছে ভারত। ঋণে সুদ বৃদ্ধি সাধারণ ঋণগ্রহীতা এবং শিল্পকে বিপাকে ফেলছে ঠিকই। তবে আমানতের ক্ষেত্রে তা বহু দিন পরে একটু নিশ্চিন্ত করেছে প্রবীণ নাগরিক-সহ সুদ নির্ভর বিভিন্ন মানুষকে। ব্যাঙ্ক ঋণ ও জমায় আরও সুদ বাড়বে কি না, তার অনেকটাই অবশ্য নির্ভর করছে ৩-৫ এপ্রিলের বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি কী সিদ্ধান্ত নেয় তার উপরে। গত সপ্তাহে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদ বাড়িয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। একই পথে হেঁটেছে ব্রিটেনের ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। শিল্পের পালে হাওয়া ফেরাতে অনেকের সুপারিশ, টানা ২৫০ পয়েন্ট রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ধার দেয় ব্যাঙ্কগুলিকে) বাড়ানোর পরে আরবিআই এ বার তাতে বিরতি দিক। তবে তা বাড়ানো হলেও ২৫ বেসিস পয়েন্টের বেশি হবে না বলেই অনুমান। লগ্নিকারীদের চোখ এখন এই সিদ্ধান্তের দিকে। সত্যি রেপো বৃদ্ধিতে ছেদ পড়লে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পাবে শেয়ার বাজার।
এ দিকে, লোকসভায় সম্প্রতি ৬৪টি সংশোধনী-সহ পাশ হল অর্থবিল, যা ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে পেশ করা হয়েছিল। মূল বাজেটের প্রধান বিষয়গুলি এখন অনেকেরই জানা। তাই তাকানো যাক শেষ বেলায় সরকারের পেশ করা সেই সব সংশোধনীগুলির দিকে, যার কম-বেশি গুরুত্ব রয়েছে সাধারণমানুষের কাছে—
এ বারের বাজেট অনুযায়ী কর রিবেট-সহ ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় ২০২৩-২৪ সালে থাকবে করমুক্ত। কিন্তু তার সামান্য বেশি হলেই কর চাপবে ৩ লক্ষ টাকার পর থেকে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে কিছুটা সুরাহা দিতে এমন এক সংশোধনী আনা হয়েছে, যাতে ৭,২৭,৭৭৭ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। চাকরিজীবী এবং পেনশন প্রাপকদের ক্ষেত্রে বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন সমেত ৭.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার থাকবে করমুক্ত। অর্থাৎ এই সংশোধনের ফলে লাভবান হতে পারেন ছোট ব্যবসা এবং বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত বেশ কিছু মানুষ, যাঁদের আয় ৭,২৭,৭৭৭ টাকার মধ্যে থাকবে।
দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভে মূল্যবৃদ্ধি সূচক প্রয়োগ এবং ২০% হারে করের সুবিধা তোলা হয়েছে সেই সব ফান্ড থেকে, যেগুলির তহবিলের ৩৫ শতাংশের বেশি শেয়ারে লগ্নি করা হয় না। এমন ফান্ডের আওতায় আসবে ঋণপত্র নির্ভর অর্থাৎ ডেট ফান্ড, গোল্ড ফান্ড, ইটিএফ ইত্যাদি।
বিদেশে বেড়াতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে খরচ মেটালে তা যাতে উৎসে কর সংগ্রহের (টিসিএস) আওতায় আসে, তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছেরিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে।
ডেট ফান্ড থেকে দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের উপর করের সুবিধা তুলে নেওয়ায়, এগুলি লগ্নিকারীদের কাছে আকর্ষণ হারাবে। করের সুবিধা নিতে এগুলিতে মূলত লগ্নি করেন উঁচু আয়ের করদাতারা। যাঁরা ৩০% করের মধ্যে পড়েন। এঁদের অনেকেই ঝুঁকতে পারেন ব্যাঙ্ক আমানতে, যেখানে সুদ এখন আকর্ষণীয়। তবে ব্যাঙ্কে বেশি তহবিল সরলে তারা আমানত টানার জন্যে জমায় আর বেশি সুদ বৃদ্ধির প্রয়োজন বোধ করবে না। এপ্রিল-জুনে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ কী হবে, তা ৩১ মার্চ জানাবে কেন্দ্র। কয়েকটি প্রকল্পে জানুয়ারি থেকে সুদ বাড়ানো হয়েছে। এই দফায় সুদে তেমন হেরফের হবে বলে মনে হয় না।
(মতামত ব্যক্তিগত)