খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে নজর লগ্নিকারী। প্রতীকী চিত্র।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে উৎসবে ভরপুর অক্টোবর শেষ হল। গত দু’বছর ঝিমিয়েথাকার পরে কেনাকাটার বাজার ছিল চাঙ্গা এ বার। অনেক ক্ষেত্রেই এর প্রতিফলন চোখে পড়তে শুরু করেছে।
অক্টোবরে জিএসটি বাবদ কোষাগারে এসেছে ১,৫১,৭১৮ কোটি টাকা। এই নিয়ে দু’বার সংগ্রহ ছাড়াল ১.৫ লক্ষ কোটি। গাড়ি বিক্রিও বেড়েছে ভাল রকম। মারুতি-সুজ়ুকির বিক্রি ২৮.৭% বেড়ে হয়েছে ১,৪০,৩৩৭। হুন্ডাইয়ের ২৯.৬% বেড়ে ৪৮,০০১। টাটা মোটরস এবং মহিন্দ্রার বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩.২% ও ৬০.৪%। গাড়ির চাহিদা ও বিক্রি বাড়লে তার সুফল পায় বহু সহযোগী শিল্প। মনে করা হচ্ছে, অন্যান্য শিল্পেও উৎসবের মরসুমে দু’বছরের জমে থাকা কেনাকাটার প্রভাব অক্টোবর-ডিসেম্বরে সংস্থার আর্থিক ফলে প্রতিফলিত হবে। গত ক’মাসে আবাসনের চাহিদাও বেড়েছে।
বিশ্ব বাজারের হাল যা-ই হোক, এত সব ভাল খবর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা রেখেছিল। মোট ৯৯০ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স পৌঁছেছে ৬০,৯৫০ অঙ্কে। নিফ্টি ১৮ হাজারের উপরে (১৮,১১৭)। ইস্পাতের মতো কিছু শিল্পে ভাটার টান থাকলেও, বিশেষত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলি গত তিন মাসে কোভিডের ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে। তাদের ব্যবসাও আয় বেড়েছে। কমেছে অনুৎপাদক সম্পদ। আগামী সাত দিনের মধ্যে বেরোবে বাকি সব ফলাফল। শেয়ার বাজারে তার প্রভাব থাকবে।
তবে সবটাই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির উপর নির্ভর করছে। অক্টোবরের পরিসংখ্যান প্রকাশ হবে ১১ নভেম্বর বিকেলে। লগ্নিকারীরা সে দিকে তাকিয়ে। কারণ, সেপ্টেম্বরের ৭.৪১ শতাংশের চেয়ে তা বাড়লে ডিসেম্বরে ভারতেও ফের বড় মাপের সুদ বৃদ্ধি নিশ্চিত। বাজারও ধাক্কা খেতে পারে। আর কমে থাকলে সুদ হয়তো ততটা বাড়বে না। আরও উঁচুতে মাথা তুলতে পারে সূচক। বর্তমান অবস্থায় ৫-৭ ডিসেম্বরের বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ৩৫-৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে আনতে আমেরিকায় শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ ও ব্রিটেনে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড সম্প্রতি ফের সুদবাড়িয়েছে আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট করে। তবে এতে দমে যায়নি ভারতের বাজার। লগ্নিকারীদের অনেকেরই ধারণা, এ দেশের অর্থনীতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি মজবুত। অক্টোবরে মূল্যবৃদ্ধির হার দেখে তা নিয়ে আরও নিশ্চিন্ত হতে চান তাঁরা।
স্বস্তির খবর আরও আছে। যেমন, সেপ্টেম্বরে দেশের আটটি মূল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে ৭.৯%। পরিষেবা ও উৎপাদনে বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে সমীক্ষা। বিভিন্ন সংস্থার জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফলও মোটের উপরে ভাল। টাটা স্টিলের নিট লাভ ৯০% কমলেও, এয়ারটেল ও এল অ্যান্ড টি-র বেড়েছে যথাক্রমে ৮৯% ও ২৬%। ১৮% বেড়ে এইচডিএফসি-র ক্ষেত্রে তা ৪৪৫৪ কোটি টাকা। ৭৪% বেড়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের মুনাফাও।
(মতামত ব্যক্তিগত)