সঞ্জীব সান্যাল, অর্থ মন্ত্রকের প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা।
ঋণের বোঝা কমাতে গত বছরের বাজেটে বিদেশে সরকারি বন্ড ছেড়ে ডলারে ধার করার পরিকল্পনা করেছিল অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা আপাতত হিমঘরে। এ বার বিদেশি লগ্নিকারীদের জন্য বিশেষ সরকারি ঋণপত্র ছেড়ে ঘরে টাকা তুলতে চাইছে কেন্দ্র। যা আসবে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে। অর্থ মন্ত্রকের প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল আনন্দবাজারকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটেই ঘোষণা করেছেন, অনাবাসী লগ্নিকারীদের জন্য বিশেষ ধরনের সরকারি ঋণপত্র নিয়ে আসা হবে। তাতে বিদেশি লগ্নির কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকছে না।’’
তা হলে গত বছরের বিতর্কিত বন্ডের সঙ্গে এর ফারাক কী?
সঞ্জীব বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ডলারে নয়, ভারতীয় মুদ্রাতেই ঋণ নেওয়া হবে। কিন্তু বিদেশি লগ্নিকারীরা ইচ্ছে মতো সেই সভ্রেন বন্ড বেচাকেনা করতে পারবেন। এতে আমাদের সরকারি বন্ড আন্তর্জাতিক বন্ড সূচকেও জায়গা করে নিতে পারবে। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে যাবে।’’
সরকারি বন্ডে বিদেশি লগ্নিকারীদের বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা ৬%। বন্ডের বাজার বিদেশি লগ্নির জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। কারণ, হঠাৎ বিদেশি লগ্নি বিদায় নিলে সেই বাজার টালমাটাল হতে পারে। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, বিশেষ কিছু সরকারি বন্ডে এর কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না।
বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে সরকার ৭.৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেবে। এর একটা অংশ আসবে অনাবাসী লগ্নিকারীদের জন্য বিশেষ সরকারি বন্ডের মাধ্যমে। প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি ঋণের পরিমাণ ও তার সুদের বোঝা বাড়ছে। সেই আসল ও সুদ কমাতেই বিদেশ থেকে সস্তায় ঋণের সিদ্ধান্ত।
সঞ্জীব বলেন, ‘‘ব্লুমবার্গ বার্কলেজ গ্লোবাল ইনডেক্স, এফটিএসই রাসেল এশিয়া প্যাসিফিক বা জে পি মর্গ্যান গভর্নমেন্ট বন্ড ইনডেক্সের মতো আন্তর্জাতিক বন্ড সূচকগুলির এক একটিতে ২ থেকে ৩ লক্ষ কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে। কিন্তু এ দেশের সরকারি বন্ড আন্তর্জাতিক বন্ড সূচকে জায়গা পায়নি। তাই ওই সব তহবিল কেন্দ্রীয় সরকার এবং এ দেশের কর্পোরেট সংস্থাগুলির কাছে অধরা। এই সব সূচকে জায়গা পাওয়ার প্রাথমিক শর্তই হল, বিদেশি লগ্নিতে ঊর্ধ্বসীমা রাখা চলবে না।’’