রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেই মেয়াদি জমায় দ্রুত তা ছাঁটাইয়ে তৎপর হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু অভিযোগ, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঋণে সুদ কমছে না সে ভাবে। কোনও ব্যাঙ্কে তা বরং উল্টে বেড়েছে। কোথাও তা কমেছে জমায় সুদ ছাঁটাইয়ের থেকে অনেক কম হারে (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)। এই অভিযোগ ফের মাথাচাড়া দিল সোমবার স্টেট ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় সুদ কমানোর ঘোষণায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মেয়াদের আমানতে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদ কমিয়েছে তারা। কিন্তু ঋণে তা কমানোর কথা এ দিন বলেনি ব্যাঙ্কটি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অবশ্য দাবি, আগামী দিনে ঋণে সুদ কমানোর জমি তৈরি করতেই এ দিন জমায় তা ছাঁটাইয়ের কথা বলেছে স্টেট ব্যাঙ্ক।
চাহিদায় ভাটার কারণে অর্থনীতির চাকা বসে যাচ্ছে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ কমানোর আর্জি জানিয়েছে কেন্দ্র, শিল্পমহল। টানা তিন বার ঋণনীতিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আশা, তাতে শিল্পের মূলধন সংগ্রহের খরচ কমবে। সস্তা হবে বাড়ি, গাড়ি সমেত বিভিন্ন ঋণও। চাঙ্গা হবে চাহিদা।
কিন্তু পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে ঋণে সুদ সেই অনুপাতে কমেনি। অনেকেরই প্রশ্ন, শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে হারে সুদ কমিয়েছে, তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ঋণে সুদ কমল কোথায়? তা ছাড়া, শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ ছাঁটাইয়ের মূল উদ্দেশ্য তো ছিল চাহিদাকে চাঙ্গা করা। কিন্তু এক দিকে ঋণে সুদ তেমন কমেনি। ফলে সেই সূত্রে বিক্রিবাটাও তেমন বাড়ছে না। অন্য দিকে জমায় সুদ কমেছে। যাতে উল্টে হাতে টাকা আরও কমে যাবে সুদনির্ভর মানুষের। তাহলে চাহিদার পালে হাওয়া লাগবে কী ভাবে?
নতুন ঘোষণা
• মেয়াদি জমায় সুদ কমাল স্টেট ব্যাঙ্ক। যা কার্যকর হবে ১ অগস্ট থেকে।
• ৭ থেকে ৪৫ দিনের
মেয়াদে সুদ ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হচ্ছে ৫%।
• ৪৬ থেকে ১৭৯ দিনের মেয়াদে তা কমছে ৫০ বেসিস পয়েন্ট। দাঁড়াচ্ছে ৫.৭৫ শতাংশে।
• ১৮০ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদে ব্যক্তিগত খুচরো জমায় সুদ কমছে ২০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।
• তবে ওই মেয়াদে জমার অঙ্ক ২ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সুদ কমছে ৩৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত।
চেষ্টা করেও...
• টানা তিন ঋণনীতিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ (রেপো রেট) কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মোট ৭৫ বেসিস পয়েন্ট।
• কিন্তু ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত (এমনকি শেষ ঋণনীতির আগের এক বছরেও) বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ঋণে সুদ কমিয়েছে নামমাত্র। অথচ মেয়াদি জমায় তা মন্দ কমেনি।
অবাক ছবি
• ফেব্রুয়ারির ঋণনীতির আগে ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি স্টেট ব্যাঙ্কে এক বছর মেয়াদের ঋণে এমসিএলআর* ছিল ৮.৫৫%। ১০ জুলাইয়ের হিসেবে তা ১৫ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ৮.৪%।
• সেখানে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৫ বছরের মেয়াদি আমানতে স্টেট ব্যাঙ্কে সুদ ছিল ৬.৮৫% (প্রবীণদের ৭.৩৫%)। ২০১৯ সালের জুনে তা কমে হয়েছে ৬.৬% (প্রবীণদের ৭.১%)। তার উপরে আজকের ধাক্কা।
• ২০১৮ সালের জুনে ইউকো ব্যাঙ্কে এমসিএলআর ছিল ৮.৫৫%। ২০১৯ সালের জুনে তা ৮.৬৫%। অথচ ওই সময়ে ৫ বছরের মেয়াদি আমানতে সুদ ৬.৬% থেকে কমে হয়েছে ৬.৫%।
• ২০১৮ সালের ১ জুন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে এমসিএলআর ছিল ৮.৩৫%। এ বছরের ১৪ মে তা হয়েছে ৮.৬%। অথচ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ৫ বছরের আমানতে সুদ একই (৬.৫%)।
• প্রায় একই রকম ছবি অন্যান্য ব্যাঙ্কেও।
অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ দিনও ঋণে সুদ ছাঁটাইয়ের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমানো সত্ত্বেও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের ঋণে সুদ সে ভাবে না কমা নিয়ে আগেও নিজেদের জমানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রঘুরাম রাজন, উর্জিত পটেলের মতো শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নররা।
আরও পড়ুন: গ্রামে রাত কাটাতে নির্দেশ, ‘দিদিকে বলো’ দাওয়াই মমতার
তবে অনেকের মতে, ঋণে সুদ কমানোর জমি তৈরির জন্যই জমায় তা নামিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। যাতে তহবিল সংগ্রহের খরচ কমে। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারের মতে, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালেই সব সময় ঋণে তা কমানো সম্ভব হয় না। তহবিল সংগ্রহের খরচ নামানোও জরুরি।’’ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘এ বার অন্য ব্যাঙ্কও জমায় সুদ কমাতে পারে।’’
এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের ইডি কে রামচন্দ্রন এবং এ কে দাস অবশ্য বলেন, ‘‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সুদে খরচ এবং তা থেকে আয় বিচার করে।’’