প্রতীকী ছবি।
চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আয়করের বোঝা কমানোর আর্জি জানাল দুই প্রতিনিধি দলই। রাখল পরিকাঠামোয় বিপুল সরকারি লগ্নি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানোর সুপারিশও। কিন্তু শিল্প যেখানে ব্যবসা করার রাস্তা আরও মসৃণ করায় (ইজ অব ডুয়িং বিজ়নেস) জোর দিল, সেখানে কর্মী সংগঠনগুলি চাইল বিমা, পেনশনের মতো সামাজিক সুরক্ষার আরও পোক্ত জাল। যেটা ছাড়া, স্রেফ ব্যবসার সুবিধার জন্য সহজে সাময়িক নিয়োগ আর ছাঁটাইয়ের জেরে প্রায় সমস্ত শিল্পের সব কর্মীর সর্বক্ষণ প্রবল অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার বিষয়ে চিন্তিত তারা। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হতে প্রশিক্ষণেরও দাবি করেছেন কর্মী প্রতিনিধিরা।
ফি বছর বাজেট তৈরির আগে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থমন্ত্রী। তার অঙ্গ হিসেবে বৃহস্পতিবার নির্মলা সীতারামন বসেন শিল্প ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে। শিল্পের তরফে সিআইআই প্রেসিডেন্ট বিক্রম কির্লোস্কর, আরপি-সঞ্জীব গোয়েন্কা গোষ্ঠীর কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কা, ফিকি প্রেসিডেন্ট সন্দীপ সোমানি প্রমুখ ছিলেন। একই দিনে নির্মলার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএমএস, এআইসিসিটিইউ, সিটু, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি-সহ বিভিন্ন কর্মী ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা।
শিল্পের দাবি, অর্থনীতির হাল ফেরাতে চাহিদা চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের (আয়কর কমানো, পরিকাঠামোয় লগ্নি বৃদ্ধি ইত্যাদি) পাশাপাশি দেশে ব্যবসার পথ মসৃণ করার বিষয়ে মন দিক সরকার। তবেই গতি ফিরবে অর্থনীতির চাকায়।
শিল্পের চাহিদা
ব্যবসার পথ সহজ করতে
• সংযুক্তি, অধিগ্রহণ ও সংস্থা ভাগের রাস্তা মসৃণ হোক। সরল হোক এই সংক্রান্ত নিয়ম ও কর ব্যবস্থা।
• এনসিএলটি মারফত সংস্থাকে চাঙ্গা করা বা দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়ার গতি বাড়ুক।
• অনেক কম সময়ে সায় মিলুক বিদেশি লগ্নিতে।
• বাজার ধরতে প্রথমে জলের দরে পণ্য বিক্রি বা তৈরির খরচের থেকেও কম দামে আমদানি করা পণ্য বিক্রিতে (ডাম্পিং) বাঁধ দিক কেন্দ্র।
অর্থনীতির হাল ফেরাতে
• বছরে আয় ২০ লক্ষ টাকার কম হলে কর কমুক।
• চাঙ্গা করার চেষ্টা হোক গ্রামীণ অর্থনীতি।
• পরিকাঠামোয় লগ্নি বাড়ুক। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে জোর দেওয়া হোক।
• এনবিএফসি-র সমস্যা মিটিয়ে সেখানে স্বাভাবিক হোক নগদের জোগান।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমালেও, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক কমিয়েছে গড়ে ৪৫ বেসিস পয়েন্ট। কিস্তির অঙ্ক কমাতে ব্যবস্থা হোক পুরো সুবিধা গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর।
ইউনিয়নের দাবি
কর্মী স্বার্থে
• মাসে ন্যূনতম বেতন ২১,০০০ টাকা। পেনশন ৬,০০০ টাকা।
• বছরে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করশূন্য।
• গ্র্যাচুইটি হিসেবের জন্য কাজ করা প্রতি বছরের ৩০ দিন করে ধরা হোক। এখন যা ১৫ দিন। তোলা হোক বছর সংখ্যার ঊর্ধ্বসীমাও।
• সংস্থায় ১০ জন কর্মী হলেই বাধ্যতামূলক হোক কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা কাটানো। এখন যা ২০ জন।
• সামাজিক সুরক্ষার জাল পোক্ত হোক সকলের জন্য।
চাহিদা চাঙ্গা করতে
• ছাঁটাই কমুক। তৈরি হোক নতুন কাজের সুযোগ।
• বিপুল সরকারি লগ্নি আসুক পরিকাঠামো, কৃষিতে।
• গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের সুবিধা ছড়াক শহরে। নিশ্চিত কাজের দিন হোক অন্তত ২০০।
• রাশ টানা হোক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণে।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সম্প্রতি কেন্দ্র চারটি নতুন শ্রম বিধি সংসদে আনার সময়েই কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ ছিল, বহু ক্ষেত্রে শ্রমিক স্বার্থের কথা না-ভেবে স্রেফ ব্যবসা করার পথ আরও সহজ করে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের’ তালিকায় উপরে ওঠার লক্ষ্যে নিয়ম বদলাতে চাইছে তারা। যেমন, ওই প্রস্তাবিত বিলে যে ভাবে সহজে নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের কথা বলা রয়েছে, ইউনিয়নগুলি তার ঘোর বিরোধী। তাদের প্রশ্ন, যে দেশে সামাজিক সুরক্ষার জাল কর্মীদের জন্য কার্যত নেই, সেখানে কী ভাবে সহজে ছাঁটাইয়ের দরজা খোলা সম্ভব? এ দিনও তাদের আক্ষেপ, চাহিদা বৃদ্ধির দাওয়াই খোঁজা হচ্ছে। অথচ কাজ খোয়াচ্ছেন বহু মানুষ।
আরও পড়ুন: অর্থোডক্স চায়ে ভর্তুকি বৃদ্ধির আর্জি
এই দু’রকম দাবির মধ্যে নির্মলা ভারসাম্য রাখবেন কী ভাবে, তা দেখা যাবে বাজেটে। তবে অনেকেরই মত, সে কাজ সহজ হবে না। ঠিক যেমন স্পষ্ট নয় টানাটানির রাজকোষে ঘাটতি মাত্রাছাড়া না-করে কেন্দ্র পরিকাঠামো বা কৃষিতে খরচ করবে কোথা থেকে?
আরও পড়ুন: গ্রাহক পিছু খরচ বাড়ুক, চান মিত্তল