চাহিদায় টান, নির্মলার কাছে চাঙ্গার দাওয়াই চায়

অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এক লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ চাইছেন শিল্পপতিরা

শিল্পপতিরা বললেন, আয়করের বাড়তি বোঝার জন্য ভারতের বদলে ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, বাংলাদেশে কারখানা খুলতে আগ্রহী তাঁরা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী 

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫১
Share:

মনোযোগী: শিল্পের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী। সঙ্গে নীতি আয়োগ সিইও অমিতাভ কান্ত (বাঁ দিকে) এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। পিটিআই

বাজেটের আগেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে শিল্পপতিদের অনুরোধ ছিল, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শিল্পের জন্য ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করুক কেন্দ্র। যাতে চাহিদা চাঙ্গা হয়। ফেরে লগ্নি। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে তখন তাতে কান দেননি নির্মলা। বরং বাড়তি সারচার্জ চাপিয়ে দেন অতি-ধনীদের আয়করের উপরে। যার আওতায় চলে আসে মূলধনী বাজারে বিদেশি সংস্থার লগ্নিও (ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট বা এফপিআই)। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন শিল্প প্রতিনিধিরা। আর্জি জানালেন, মুষড়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এক লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করুক কেন্দ্র। সরুক বিদেশি লগ্নি সংস্থার উপরে ওই সারচার্জ। কিছু পণ্যে কমানো হোক জিএসটিও।

Advertisement

শিল্পপতিরা বললেন, আয়করের বাড়তি বোঝার জন্য ভারতের বদলে ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, বাংলাদেশে কারখানা খুলতে আগ্রহী তাঁরা। তাতে অবশ্য প্রশ্ন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কী হবে? কোথায় হবে কাজের সুযোগ?

বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রী এ সবে কান না দিলেও এখন চাপের মুখে অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হচ্ছে তাঁকে। বৈঠকের পরে শিল্পপতিরা জানান, শিল্পকে চাঙ্গা করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মিলেছে। বিশেষত এফপিআইয়ে বাড়তি সারচার্জ তুলে নিতে অধ্যাদেশ জারি হতে পারে। অথচ সপ্তাহ দুই আগেই নির্মলা সংসদে বলেছিলেন, কর দিতে হবে। দরকার হলে ওই বিদেশি সংস্থাগুলি ট্রাস্ট থেকে কোম্পানি হয়ে যাক।

Advertisement

ভাবনা শুরু হয়েছে ত্রাণ প্রকল্প নিয়েও। কিন্তু প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে কোথায় পৌঁছবে রাজকোষ ঘাটতি? বিশেষত বৃদ্ধিতে যখন ভাটা। জিএসটি আদায় আশানুরূপ নয় এখনও।

সমস্যা

দেশে চাহিদায় ভাটা। রফতানিতে মন্দ গতি। বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। দেখা নেই বেসরকারি লগ্নির। এনবিএফসি-সঙ্কটে ঋণে টান। বৃদ্ধির গতি শ্লথ। ঝিমিয়ে অর্থনীতি।

আর্জি

আয়করের বোঝা কমুক। নইলে কারখানা খোলার কথা ভাবতে হবে বাংলাদেশ, মেক্সিকো, ভিয়েতনামে। জিএসটি কমুক গাড়ি, সিমেন্ট, ভোগ্যপণ্যে। শেয়ার বাজারে লগ্নিকারী বিদেশি আর্থিক সংস্থার উপরে সারচার্জ হ্রাস। লগ্নি ফেরাতে ১ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্প দিক কেন্দ্র।

সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে খরচে গরমিল হলে, ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ৩ বছর পর্যন্ত জেলের বিল সংসদে পাশ হয়েছে সদ্য। কিন্তু এ নিয়ে শিল্প মহল ক্ষোভ জানালে, মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, তেমনটা হবে না!

এ দিন শিল্পপতিরা স্পষ্ট জানান, অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া যথেষ্ট চিন্তার কারণ। অ্যাসোচ্যামের প্রেসিডেন্ট বি কে গোয়েন্‌কা বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ জরুরি। চাই ১ লক্ষ কোটি টাকার দাওয়াই।’’ টাটা স্টিলের সিইও-এমডি টি ভি নরেন্দ্রন বলেন, ‘‘২০% ইস্পাত গাড়ি শিল্পে ব্যবহার হয়। গাড়ি বিক্রি কমায় ধাক্কা খেয়েছে ইস্পাত শিল্পও।’’ তাঁর আর্জি, ছবি বদলাতে পরিকাঠামো ব্যয়ে গতি আনুক কেন্দ্র। জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল সরব হন এনবিএফসি-র সমস্যা নিয়ে। ওঠে আয়কর দফতর ও ‘ইন্সপেক্টর রাজ’-এ হেনস্থার কথা।

আইটিসি-কর্তা সঞ্জীব পুরী, ফিকি-র প্রেসিডেন্ট সন্দীপ সোমানি, পিরামল গোষ্ঠীর কর্ণধার অজয় পিরামলরা তুলেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সুদ না কমার কথা। দাবি উঠেছে, ছোট-মাঝারি শিল্পের ব্যবসার পরিবেশ মাপতে আলাদা সূচকেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement