—প্রতীকী ছবি।
গত এপ্রিলে দেশের পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুলে হল ১.২৬%। যা ১৩ মাসে সর্বোচ্চ। মার্চে সেই হার ছিল ০.৫৩%। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি চড়লেও সংখ্যার বিচারে তা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। কিন্তু উদ্বেগ বাড়ছে এই পরিসংখ্যানের প্রস্থচ্ছেদ করে ভিতরের উপাদানগুলিকে বিশ্লেষণ করলে। দেখা যাচ্ছে, সেখানেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চড়ে ৭% পেরিয়ে গিয়েছে। ঠিক যেমন মাসের পর মাস ঘটছে খুচরো বাজারে।
এক দিন আগেই খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার প্রকাশ করেছে জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর। তা কমে হয়েছে ১১ মাসের সর্বনিম্ন (৪.৮৩%)। কিন্তু খাবারের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৮.৭% বেড়েছে। এই হার মার্চের থেকেও বেশি। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রকাশ করা পরিসংখ্যানেও দেখা গেল, পাইকারি দামের নিরিখে হিসাব করা মূল্যসূচকের মাথা তোলার থেকেও উদ্বেগজনক সেই খাদ্যপণ্য। যার মূল্যবৃদ্ধি সেখানে ৭.৭৪% ছুঁয়েছে। মার্চে ছিল ৬.৮৮%। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে আনাজ (২৩.৬%)। আলুর মূল্যবৃদ্ধি ৭১.৯৭%, পেঁয়াজের ৫৯.৭৫%। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পাইকারি দামের প্রভাব সরাসরি ক্রেতার উপর পড়ে না। তাতে সময়ও লাগে। তার উপর এখানকার মূল্যবৃদ্ধিতে খাদ্যপণ্যের অংশীদারি সামান্য। তবে সামগ্রিক ভাবে সর্বত্র খাদ্যপণ্যের এই চড়ে থাকাটা দুশ্চিন্তার। পাইকারি খরচে ব্যবসায়ীরা সুরাহা না পেলে আগামী দিনে ক্রেতার খরচ কমবে কী করে! অনেকে বলছেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ ধার্য করার সময় খুচরো বাজারের দরকে গুরুত্ব দেয় ঠিকই। কিন্তু খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির এতটা চড়ে থাকার বিষয়টিও অগ্রাহ্য করার নয়। কারণ, সমস্যাটা সার্বিক। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, জুনের ঋণনীতিতেও সুদ কমার আশা নেই।
এ দিন কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ‘‘এপ্রিলে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি চড়েছে মূলত খাদ্যপণ্য, বিদ্যুৎ, অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পণ্য উৎপাদনের খরচ মাথা তোলায়।’’ এই নিয়ে টানা দু’মাস এই বাজারে এই হার মাথা তুলল।
মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, ‘‘বিশ্ব বাজারে পণ্যের দামের উপরে পাইকারি বাজারের দর অনেকটা নির্ভর করে। গত কয়েক মাসে অশোধিত তেল-সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। তার প্রভাবই পড়েছে মূল্যবৃদ্ধিতে। আগামী দু’মাসের মধ্যে পাইকারি দর আরও মাথাচাড়া দিয়ে ২% পার করতে পারে।’’ ইক্রার পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির গড় হার হতে পারে ৩.৩%।
বণিকসভা পিএইচডি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব আগরওয়ালের আশা, খারিফ শস্য মান্ডিতে আসতে শুরু করলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে। যদিও একাংশের বক্তব্য, তার এখনও অনেক দেরি আছে। তা ছাড়া গত বছর শীতকালেও সেগুলির দাম কমেনি। এ বার গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ চিন্তা বাড়িয়েছে। আশা-ভরসা শুধু ভাল বর্ষার সম্ভাবনা। এ দিন খুচরো মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্রিসিল বলেছে, খাবারের দামের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি সামলাতে হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্রদের। কারণ, নিচু আয়ের সমস্যা যেমন তাঁদের রয়েছে, তেমনই খাদ্যপণ্য, জ্বালানি এবং সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধির হারও শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি।