কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
কোভিড-কালে ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানোই যে পাখির চোখ, আগেই বুঝিয়েছিল মোদী-সরকার। তার জন্য গত বাজেটে রাজ্যগুলিকে ৫০ বছর পরে শোধ করলেই হবে বলে ১ লক্ষ কোটি টাকার সুদ-মুক্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল। বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করলেন, আসন্ন অর্থ বছর, ২০২৩-২৪-এও ১.৩ লক্ষ কোটি টাকা সুদ-মুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। যা ৫০ বছর পরে শোধ করা যাবে। কিন্তু তার সঙ্গে একগুচ্ছ শর্ত বেঁধে দিলেন। যার ফলে কেন্দ্রের দেখানো পথেই চলতে হবে রাজ্যগুলিকে।
কেন্দ্রীয় অর্থসচিব টি ভি সোমনাথন আজ জানিয়েছেন, শর্ত না মানায় রাজ্যগুলি পরিকাঠামোয় পুরো অর্থ খরচ করতে পারেনি। রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের মতে, সামাজিক ক্ষেত্রে বিপুল দায়বদ্ধতার জন্য মূলধনী খাতে বিপুল বরাদ্দ করা রাজ্যের নিজের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তাই এই ক্ষেত্রে অনেকাংশেই কেন্দ্রের বরাদ্দের উপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘আসলে এটা সাহায্য নয়। কর্নাটকে ভোটের জন্য বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হল। বাকি রাজ্যের কোথাও কোনও সমস্যা নেই? সবাইকে কি একই চোখে দেখে কেন্দ্র?’’
আজ সীতারামন জানিয়েছেন, আগামী অর্থ বছরে রাজ্যগুলি নিজস্ব জিডিপি-র ৩.৫% রাজকোষ ঘাটতি রাখতে পারবে। তবে তার মধ্যে ০.৫% নির্ভর করবে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের উপর। এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কথা মতো সংস্কার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্যেরই আপত্তি রয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যগুলি যাতে ‘জাতীয় অগ্রাধিকার’ মেনে কাজ করে, তার জন্য নীতি আয়োগ আগামী তিন বছর ‘রাজ্য সহায়তা মিশন’-এর কাজ করবে। কেন্দ্রীয় সাহায্যে চলা প্রকল্পেও কেন্দ্র, রাজ্যের ভাগে রদবদল হতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু প্রকল্পে আর্থিক অনুদান বদল হতে পারে। যাতে আরও ভাল ফল মেলে।
পরিকাঠামোয় খরচের জন্য ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আগেও শর্ত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেই সেই অর্থ অন্য খাতে খরচের অভিযোগ উঠেছিল। এ বার বাজেটে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, এই ঋণের পুরোটাই খরচ করতে হবে মূলধনী খাতে। অর্থের সিংহভাগ রাজ্য নিজের মতো খরচ করতে পারবে। কিন্তু বাকি অংশ নির্ভর করবে রাজ্যের নিজস্ব মূলধনী ব্যয়বৃদ্ধির উপর। পুরনো সরকারি গাড়ি বাদ দেওয়া, নগর পরিকল্পনা-সংস্কার, পুরসভাগুলির আর্থিক পরিচালনার সংস্কার, পুলিশের আবাস-থানা তৈরি, ‘ইউনিটি মল’ নির্মাণ, শিশু-কিশোরদের পাঠাগার ও ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরির মতো মোদী সরকারের কর্মসূচি মেনে চলার শর্তও আরোপ করা হয়েছে।