অতিমারিতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি ইতিমধ্যেই বহু সাধারণ মানুষ, বিশেষত গরিব নাগরিকের রুজি-রোজগার কেড়েছে, তাঁদের জীবনযাপনকে করে তুলেছে আগের তুলনায় হাজার গুণ কঠিন। সেই সঙ্গে ভয়াবহ উচ্চতায় ঠেলে তুলেছে আর্থ-সামাজিক বৈষম্যকে। এই পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষা জানাল, আগামী পাঁচ বছরে ভারতে অতি বিত্তবানের সংখ্যা প্রায় ৬৩% বাড়বে। বৃদ্ধির হারের নিরিখে গোটা বিশ্বে যা দ্বিতীয়। ৬৭% নিয়ে প্রথম স্থান দখল করা ইন্দোনেশিয়ার পরেই। শুধু তা-ই নয়, ওই ৬৩ শতাংশের মধ্যে কোটিপতি বা ধনকুবেরের সংখ্যা বাড়বে ৪৩%। এ ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার বিশ্ব (২৪%) এবং এশিয়ার (৩৮%) গড় বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি।
উল্লেখ্য, যাঁদের সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ডলার (প্রায় ২২১ কোটি টাকা) কিংবা তার চেয়ে বেশি, তাঁরা অতি বিত্তবান (আলট্রা রিচ)। আর যাঁদের অন্তত ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭৩৭০ কোটি টাকা), তাঁরা ধনকুবের (বিলিয়নেয়ার)।
করোনা কামড়ে অর্থনীতি তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাক্রম যে বহু গরিব মানুষকে আরও গরিব করেছে এবং বহু ধনীকে আরও ধনী, সেই দাবি স্পষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। নাইট ফ্র্যাঙ্ক বলছে, আগামী দিনে দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি নতুন করে বিত্তশালী হতে পারেন। কেউ কেউ কোটিপতির তালিকায় পা রাখবেন। সংস্থার সিএমডি শিশির বাইজলের দাবি, ‘‘অতিমারির পরে আর্থিক উন্নতির জেরে কয়েক বছরের মধ্যেই পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির তকমা হাসিল করে ফেলবে ভারত। এশিয়ার ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে উঠবে। সেই পথে সফরের ফলই অতি বিত্তবান ও ধনকুবেরদের এমন বাড়-বাড়ন্ত।’’
এমনিতে অসাম্যের অসুখ ভারত এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন কিছু নয়। তবে কোভিডের ছোবল তাকে কতটা বাড়িয়ে দিয়েছে, তা মাস দেড়েক আগে ধরা পড়েছিল উপদেষ্টা সংস্থা অক্সফ্যামের রিপোর্টে। যেখানে দেখা গিয়েছিল, করোনাকালে প্রতি সেকেন্ডে দেশের ধনীতম ব্যক্তি, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের কর্তা মুকেশ অম্বানীর সম্পদ যে পরিমাণে বেড়েছে, তার সমান আয় করতে একজন অদক্ষ শ্রমিকের লাগবে তিন বছর। আর অম্বানী এক ঘণ্টায় যা রোজগার করেছেন, সেই অঙ্ক ছুঁতে
১০,০০০ বছর।
নাইট ফ্র্যাঙ্কের দাবি, ভারতে অতি বিত্তবান এখন ৬৮৮৪ জন। আগামী পাঁচ বছরে তাঁদের সংখ্যা ১১,০০০ ছাড়াবে। আর এঁদের মধ্যে ধনকুবেরদের সংখ্যা ২০২৫ সালে ছোঁবে ১৬২। ২০২০ সালে ছিল দেশে ধনকুবের ছিলেন ১১৩ জন। অক্সফ্যামের সমীক্ষা দেখিয়েছিল, অতিমারি বহু মানুষের জীবন-জীবিকা-সঞ্চয়ে এমন ক্ষতি করেছে যে, তার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতেই দশক গড়িয়ে যাবে তাঁদের। করোনার জেরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে দারিদ্র বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কও।