তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। ছবি: পিটিআই
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও, মস্কো থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে ভারত। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় বিতর্কও রয়েছে বিস্তর। এই প্রসঙ্গে শনিবার তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ভারত যে দেশ থেকে ইচ্ছা অশোধিত তেল কিনবে। রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ রাখতেও ভারতকে কেউ বলেনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর রকেট গতিতে বাড়ছিল কয়েক মাস আগে। রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে আপত্তি তুলে তাদের কার্যত একঘরে করতে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। সেই সূত্রেই রাশিয়ার অশোধিত তেলের দর মাথা নামায়। একটা সময় ব্রেন্ট ক্রুডের চেয়ে রাশিয়ার তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলার বেশি হলেও, সেপ্টেম্বর থেকে তা প্রায় ২০ ডলার সস্তা হয়। রাশিয়ার তেল কেনাবেচায় রাশ টানতেও বিশ্বের দরবারে বার্তা দিয়েছিল উন্নত দুনিয়ার কয়েকটি দেশ। দেশ ভারত অবশ্য সেই আহ্বানে এখনও সাড়া দেয়নি। ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের থেকে সস্তার তেল কেনা ক্রমশ বাড়িয়েছে দিল্লি। ভারত এক সময়ে মোট তেল আমদানির মাত্র ০.২% রাশিয়া থেকে আনলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৮%। ইরানের পরেই যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিকল্প শক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার জন্য আমেরিকা সফরে গিয়েছেন পুরী। সেখানেই তিনি জানান, দেশের ক্রেতাদের সাধ্য অনুযায়ী জ্বালানির জোগান দিতে নৈতিক ভাবে সরকার দায়বদ্ধ। তাই তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ভারত যেখান থেকে মনে করবে তেল কিনবে। কেউ তাঁকে রাশিয়ার থেকে তেল কিনতে বারণ করেছে কি? নিজেই সাংবাদিকদের কাছে সেই প্রশ্ন তুলে জবাব দেন, ‘‘না।’’
তবে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, অশোধিত তেলের দর কমা সত্ত্বেও ভারতে ছ’মাস ধরে তেলের দাম স্থির। মাঝে শুধু কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক সামান্য ছেঁটেছে এবং কয়েকটি রাজ্য কর কমিয়েছে। ফলে সস্তার অশোধিত তেলের সুবিধা এখনও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি।
সম্প্রতি অশোধিত তেল রফতানিকারী দেশগুলির বৃহত্তর গোষ্ঠী (ওপেক প্লাস) উৎপাদন দৈনিক ২০ লক্ষ ব্যারেল ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ফের তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলার ব্যাপারে পুরী আশাবাদী। তাঁর বক্তব্য, দেশের জ্বালানির জোগানের নিরাপত্তা ও সাধ্য মতো তা জোগানের নীতি স্পষ্ট থাকলে যেখান থেকে মনে হবে জ্বালানি কেনা হবে। পুরীর মতে, তেল উৎপাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে বৃহত্তর ওপেক গোষ্ঠীর। তবে সব সিদ্ধান্তেরই কিছু প্রতিফলন থাকে। যেমন তাঁর মতে, ১০ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে বাজার তৈরি ছিল। কিন্তু তা দ্বিগুণ হওয়ায় কিছুটা বিস্ময় ছড়িয়েছে। কারণ, জোগান অনেকটা কমলে ফের দর বাড়বে জ্বালানির। তা ইন্ধন জোগাতে পারে মন্দার আশঙ্কায়।