ছবি সংগৃহীত।
ডিগবাজি।
ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে মোবাইল, ফ্রিজ, তৈরি পোশাক বিক্রির ছাড়পত্র দেওয়ার চার দিনের মাথায় চাপের মুখে পড়ে লকডাউন চলাকালীন অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়া তারা আর কোনও কিছু ক্রেতার দরজায় পৌঁছতে পারবে না বলে নির্দেশ জারি করল কেন্দ্র। শুধুমাত্র তাদের অত্যাবশ্যক পণ্যবাহী গাড়িকেই চলাচলে ছাড় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই সিদ্ধান্তের জন্য চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি-র সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ খান্ডেলওয়াল। কিন্তু এতে ক্রেতা ও ছোট ব্যবসায়ীরাই অসুবিধায় পড়বেন বলে ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজনের দাবি। কংগ্রেসের কটাক্ষ, তাদের কথা শুনে এই সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রকে ধন্যবাদ। আর মোদী টুইটে লকডাউনে সরবরাহ বজায় রাখতে ছোট ব্যবসায়ীদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
চাল, ডাল, আটা, তেল, নুন, চিনি থেকে শুরু করে বিস্কুট, পাউরুটি, ডিম, দুধ, কিছু দুগ্ধজাত পণ্য, আনাজ, মাছ, মাংস— এই ঘরবন্দির সময়েও মূলত বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর জোগান ঠিক রাখতে চেয়েছে কেন্দ্র। মাথায় রাখা হয়েছে সাবান, শ্যাম্পুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও অবশ্যই ওষুধের কথা। তাই লকডাউনের শুরু থেকেই ছাড় দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দোকানগুলিকে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৫ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, ২০ এপ্রিল থেকে অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়াও ফ্রিজ-মোবাইল-ল্যাপটপ, তৈরি পোশাক, স্কুলের পড়ুয়াদের খাতা-কলম ইত্যাদিও ক্রেতার দরজায় পৌঁছতে পারবে ই-কমার্স সংস্থাগুলি।
এর পরেই চাপে পড়ে কেন্দ্র। দোকানিরা প্রশ্ন তোলেন, একেই বাজার দখলের লক্ষ্যে বিপুল ছাড় দিয়ে তাঁদের কোণঠাসা করে নেটে পণ্য বিক্রি করা ওই সমস্ত সংস্থা। এর উপরে যেখানে অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়া অন্য সমস্ত দোকান বন্ধ, সেখানে ই-কমার্স সংস্থাগুলি ওই ‘অন্যায়’ সুবিধা পাবে কেন? আপত্তি তোলে কংগ্রেস, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও।
হঠাৎ কেন্দ্রকে মত বদলাতে হল কেন, তা ওই চাপের মুখেই কি না, স্পষ্ট করেনি কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্য সলিলা শ্রীবাস্তবের যুক্তি, করোনা-আক্রমণের এই সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে রোজকার পরিস্থিতি বুঝে। কারণ, তা পাল্টাচ্ছে দ্রুত। তাঁর দাবি, অত্যাবশ্যক পণ্য ছাড়া অন্য কিছু বিক্রিতে ছাড় দিলে লকডাউন ধাক্কা খাবে আঁচ করে এই বদল। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের দাবি, এতে ই-কমার্সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াইয়ের সুযোগ পাবেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এই দাবির পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পপতি আনন্দ মহীন্দ্রা।
নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর পরে ছোট শিল্পের মতো ধাক্কা খেয়েছিল ছোট দোকানও। অভিযোগ, জিএসটি-র জটিলতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনও খাবি খাচ্ছে অনেকে। তার উপরে লকডাউনে মার খাচ্ছে ব্যবসা। অথচ দোকানিদের একটি বড় অংশ বরাবর বিজেপির বিশ্বস্ত ভোট-ব্যাঙ্ক। তাই তাঁদের ক্ষোভ আঁচ করেই এই সিদ্ধান্ত বদল বলে ধারণা অনেকের। রবিবার এই ঘোষণার পরে দেশের সাত কোটি দোকানির তরফে সিএআইটি ধন্যবাদ জানিয়েছে ঠিকই। তবে অ্যামাজ়নের দাবি, ক্রেতা তো বটেই, যে সব ছোট ব্যবসায়ী তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বেচেন, তারাও এতে হতাশ হবেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)