দেশের জিডিপি বাড়াতে রফতানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা মাথাও তুলছিল। প্রতীকী ছবি।
দেশের জিডিপি বাড়াতে রফতানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্র। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা মাথাও তুলছিল। কিন্তু অক্টোবর থেকে ছবিটা বদলেছে। সে মাসে রফতানি সরাসরি কমেছে। নভেম্বরে কার্যত অপরিবর্তিত। অথচ বাড়ছে আমদানি। ফলে চড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, চড়া মূল্যবৃদ্ধির জেরে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন উন্নত দেশে চাহিদা কমেছে। যেগুলি ভারতের প্রধান রফতানি বাজার। ফলে বিক্রিতে ভাটা। ক্ষেত্রটির পাশে দাঁড়াতে কেন্দ্রের কাছে একগুচ্ছ আর্জি জানিয়েছে রফতানি সংস্থাগুলি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠক হয়েছে তাদের। রফতানি শিল্পের সংগঠন ফিয়োর দাবি, তাদের বিপণনে বরাদ্দ যৎসামান্য। সেই অঙ্ক বাড়ানো উচিত। করে ভর্তুকি, বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড়, কম সুদে ঋণের দাবিও জানিয়েছে তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসাব, এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে দেশের রফতানি ১২.৫৫% বেড়ে হয় ২৬,৩৩৫ কোটি ডলার। কিন্তু অক্টোবরে সরাসরি ১৬.৬৫% কমে তা ২৯৭৮ কোটি ডলারে নামে। নভেম্বরে এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে মোটে ০.৫৯%। হয়েছে ৩১৯৯ কোটি। সবচেয়ে মার খেয়েছে এঞ্জিনিয়ারিং ও সামুদ্রিক পণ্য, দামি পাথর, গয়না, পেট্রোপণ্য, জামাকাপড়, রাসায়নিক, চামড়া ও চর্মজাত দ্রব্য।
রফতানি শিল্পের ধারণা, বিশ্ব জুড়ে আর্থিক অনিশ্চয়তাই এর প্রধান কারণ। এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (ইইপিসি) চেয়ারম্যান অরুণ গারোদিয়া বলেন, ‘‘আমেরিকা ভারতের রফতানির বৃহত্তম বাজার। সেখানেই মন্দার আশঙ্কা। মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা, অর্থনীতির ঝিমুনি গ্রাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ অন্যান্য বাজারকেও।’’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা বাড়তে পারে, সতর্ক করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘গত দু’বছরের মধ্যে অক্টোবরেই প্রথম রফতানি কমল।’’
নির্মলার সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে তাই করছাড়, সহজ শর্তে ঋণ এবং আর্থিক সহায়তার আর্জি জানিয়েছে রফতানি সংস্থাগুলি। ফিয়ো বলেছে, বিশ্বে যখন চাহিদা কমছে, তখন বিপণনে জোর দেওয়া হোক। বার্ষিক রফতানির ৪৬,৭০০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স প্রকল্পে যে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা ‘সিন্ধুতে বিন্দু’ বলে অভিযোগ তাদের।
রফতানিকারীদের পরামর্শ, কেন্দ্র রফতানি উন্নয়ন তহবিল তৈরি করুক। সেখানে গত বছরের রফতানির ০.৫% অনুদান মঞ্জুর করা হোক। তাদের আক্ষেপ, ডলারের নিরিখে টাকা এখনও চড়া। রফতানির জন্য আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ায় বিশ্ব বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। সংস্থাগুলির দাবি, রফতানি পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে যে সবসংস্থা কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তাদের আর্থিক সাহায্য দিক কেন্দ্র। বম্বে টেক্সটাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এস কে শরাফ বলেন, ‘‘উৎপাদিত পণ্যের ৫০ শতাংশের বেশি রফতানিকারীদের বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড় দেওয়া হোক।’’