ল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ফাইল ছবি।
অতিমারির একাধিক ঢেউ পার করে এবং তার পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহেও ভারত যে বিশ্ব অর্থনীতির ‘উজ্জ্বল বিন্দু’, তা বলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা। বুধবার সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফের সেই উপমা টানলেন আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের (আইএমএফ) এমডি ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের যে আর্থিক বৃদ্ধি হবে তাতে ভারতের ভূমিকা থাকবে ১৫%।
যদিও মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতি ঘোষণা করেছে তারা। এ দিন সেই বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সরকার নিযুক্ত সদস্য জয়ন্ত বর্মা ও অসীমা গয়াল সুদ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। জোর দিয়েছিলেন বৃদ্ধির চাকায় গতি আনায়। তবে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রতপাত্র বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির দোলাচল মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইকে জটিল করে তুলছে। শেষ পর্যন্ত সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়।
করোনার পরে অর্থনীতি যখন ছন্দে ফিরছে তখনই তাকে পথভ্রষ্ট করেছে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা। এরই মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যার জেরে এ দিন সারা বিশ্বে কেঁপে উঠেছে শেয়ার বাজার। তবে বিভিন্ন বাধাবিপত্তির থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় অর্থনীতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জর্জিয়েভা। তাঁর মতে, করোনার সময়ে শারীরিক দূরত্ব বিধির মধ্যেও বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিকে সচল থাকতে সাহায্য করেছে ডিজিটাল ব্যবস্থা। সঙ্গে রয়েছে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আর্থিক নীতি ও পুঁজি খরচ। প্রশংসা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটে প্রয়োজনীয় খরচ ও আর্থিক শৃঙ্খলার ভারসাম্যের। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের অগ্রগতি খুব ভাল। মার্চে শেষ হতে চলা অর্থবর্ষে বৃদ্ধি হতে পারে ৬.৮%। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বাকি বিশ্বের মতো ভারতের বৃদ্ধির হারও শ্লথ হবে। তা হতে পারে ৬.১%। যা বাকি বিশ্বের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের যা বৃদ্ধি হবে তাতে ১৫% ভূমিকা পালন করবে ভারত।’’ আইএমএফের পূর্বাভাস, এ বছর বিশ্বের জিডিপি বাড়তে পারে ২.৯% হারে। যা গত বছর ৩.৪% ছিল। তবে অনেকের বক্তব্য, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতা যে ক্রমাগত ধাক্কা খাচ্ছে তা স্পষ্ট বিভিন্ন সমীক্ষায়।
অন্য দিকে, ঋণনীতি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যাচ্ছে, শক্তিকান্ত মন্তব্য করেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তেল বাদে অন্যান্য পণ্যের দাম। পাত্রের বক্তব্য, ‘‘আন্তর্জাতিক অবস্থার জন্য মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই জটিল হয়েছে। অনেকের মতে, বিশ্ব অর্থনীতির যতটা মন্থর হবে বলে ভাবা হয়েছিল, এখন হয়তো ততটা হবে না। তা সত্ত্বেও বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধির অবস্থা আগের তুলনায় অনিশ্চত হয়েছে।’’