economy

ঋণ করুন আর ঘি খান, শীর্ষ ব্যাঙ্কের এমনটা চাওয়ার কারণ কী

নতুন নিয়মে শীর্ষ ব্যাঙ্ক আপনার ঋণের পরিমাণের উপর ঝুঁকির হার নির্দিষ্ট করে দিল। আর এই ঝুঁকির হার নির্দিষ্ট হল আপনার ফ্ল্যাট বা বাড়ির দামের কত অংশ আপনি ঋণ হিসাবে নিচ্ছেন তার উপর।

Advertisement

সুপর্ণ পাঠক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৪৪
Share:

শীর্ষ ব্যাঙ্ক চাইছে আপনি ঋণ করুন, আর ঘি খান।

আর চিন্তা নেই। শীর্ষ ব্যাঙ্ক চাইছে আপনি ঋণ করুন, আর ঘি খান আপনার নতুন বাড়িতে বসে। এখন আর ব্যাঙ্ক আপনাকে বলবে না যে, আপনার বাড়ির দাম যখন এই তখন আপনাকে আমরা এর বেশি টাকা ধার দিতে পারব না! তবে যত টাকা ধার নেবেন তার উপর কিন্তু সুদের হার নির্ভর করবে। কারণ, আপনি যত টাকা ধার নেবেন ব্যাঙ্কের সেই টাকা ফেরত পাওয়ার ঝুঁকি ততই বাড়বে! আর ততই কিন্তু সুদ আর সেই কারণে আপনার ইএমআই চড়া হতে থাকবে।

Advertisement

ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া যাক। ব্যাঙ্ক আপনাকে কত টাকা ধার দিতে পারবে তার হিসাব করার প্রাথমিক সূচক হল ‘লোন টু ভ্যালু’ (এলটিভি)। অর্থাৎ, আপনি যে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনছেন তার অনুপাতে কত টাকা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে আপনি ঋণ নিচ্ছেন।

আগে নিয়ম ছিল এই রকম: ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম হলে আপনি ৯০ শতাংশ টাকা ঋণ নিতে পারতেন। ৩০ লক্ষ টাকা থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম হলে তার ৮০ শতাংশ ঋণ নিতে পারতেন। আর ৭৫ লক্ষ টাকার ওপর দাম হলে আপনি পেতেন ৭৫ শতাংশ।

Advertisement

নতুন নিয়মে কিন্তু এই ঝামেলাটা আর থাকছে না। অর্থাৎ দামের উপর কত টাকা আপনি ঋণ পাবেন সেই কড়াকড়ি আর থাকল না।

কী হল এই নতুন নিয়মে? বুঝে নেওয়া যাক।

নতুন নিয়মে শীর্ষ ব্যাঙ্ক আপনার ঋণের পরিমাণের উপর ঝুঁকির হার নির্দিষ্ট করে দিল। আর এই ঝুঁকির হার নির্দিষ্ট হল আপনার ফ্ল্যাট বা বাড়ির দামের কত অংশ আপনি ঋণ হিসাবে নিচ্ছেন তার উপর। আপনার এলটিভি বা ফ্ল্যাট বা বাড়ির দামের অনুপাতে ঋণ হয় ৮০ শতাংশের কম তা হলে ব্যাঙ্কের ঝুঁকি হবে ৩৫ শতাংশ। আর ৮০ শতাংশের উপরে কিন্তু ৯০ শতাংশের নীচে হলে তা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। আগে নিতে পারতেন ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত, এখন নিতে পারবেন সাড়ে সাত কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ।

চলতি নিয়মে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে ঋণ নিতে পারতেন তা নির্ভর করত সেই সম্পত্তির দামের উপর। শীর্ষ ব্যাঙ্ক নতুন নিয়মে সেই নিয়ম শিথিল করে, কত টাকা আপনি ঋণ বাবদ নিতে পারবেন মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড় করতে, তা আপনার হাতেই ছেড়ে দিল। শুধু ঝুঁকির অঙ্কের উপর আপনার সুদ নির্ভর করবে। সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।

আরও পড়ুন: ডেবিট কার্ডেও ইএমআই সুবিধা, পুজোর মুখে ঘোষণা স্টেট ব্যাঙ্কের

বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার ঋণের উপর রাশ হাল্কা করার পিছনে যুক্তিটাও শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পরিষ্কার করে দিয়েছেন। শীর্ষ ব্যাঙ্কের যুক্তি হল, কোভিডের জন্য জিডিপি ৯.৫ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে। নির্মাণ শিল্পের ল্যাজ বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সহযোগী শিল্প— নির্মাণশিল্পে গতি এলে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোও গতি পাবে।

আর নির্মাণশিল্পকে চাগাড় দিতে প্রয়োজন তার চাহিদা তৈরি করা। এই শিল্পের একটা বড় বাজারই হল আমার-আপনার চাহিদা। আর আমি বা আপনি ঘরের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বা বাড়ি করি না। তাই ঋণ পাওয়া যদি সহজ হয়, তা হলে লোকে উৎসাহিত হবে এই বাজারে আসতে। আর মরা বাজারে জোয়ার আসবে। অন্তত শীর্ষ ব্যাঙ্কের যুক্তিটা তাই।

একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে যে, সরকার যতই শিল্পকে ঋণ নিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করুক না কেন, শিল্প কিন্তু এখনও সংশয়ে। সেই সংশয় কিন্তু লকডাউনের বহু আগে থেকেই ঘন হচ্ছিল। আর পাশাপাশি ব্যাঙ্কের হাতে টাকা আছে, কিন্তু ঋণের খরিদ্দার নেই। এ রকম ঘটনাও ঘটেছে যেখানে ঋণের গোটা প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আবেদনকারী ফিরিয়ে নিয়েছে আবেদন। চাকরি থাকবে না এই ভয়ে। এটা অবশ্যই কোভিড-কালের গল্প। কিন্তু এই গল্পটার অভিঘাত যে শেষ হয়েছে তা-ও নয়।

কোভিড পরিস্থিতিতে চাকরির বাজারে কিন্তু সব থেকে বেশি মার খেয়েছে চাকরিজীবীরা। আর সম্পত্তির খুচরো বাজারে অর্থাৎ ফ্ল্যাটের চাহিদায় এই শ্রেণির খদ্দেরদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। আর সমস্যা এখানেই। ডিম আর মুরগির। বাজার চাগাতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক গৃহঋণের উপর রাশ হাল্কা করছে। কিন্তু যাঁরা সেই ঋণ নেবেন, তাঁরা ভুগছেন আয় নিয়ে সংশয়ে। কবে চাকরি যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। নতুন শ্রম আইন এই সংশয়ে আরও ধোঁয়া দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তার আবহ আরও ঘন হচ্ছে দ্রুত সব আইন বদলে।

তাই গৃহঋণের বাজারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের রাশ হাল্কা করার প্রয়াসের অভিঘাত বাজারে কী ভাবে পড়বে তা সময়ই বলবে। আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই এই মুহূর্তে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement