ধাপ ছেঁটে কর সরলের বার্তা

জিএসটির আওতায় করের এতগুলি হার থাকার জন্য সেই শুরু থেকে সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম-সহ অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার ‘এক দেশ এক কর’-এর কথা বললেও, বাস্তবে এতগুলি হার পরোক্ষ করটির মূল উদ্দেশ্য মাটি করেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

অরুণ জেটলি। —ফাইল চিত্র।

জিএসটির আওতায় করের এতগুলি হার থাকার জন্য সেই শুরু থেকে সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম-সহ অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার ‘এক দেশ এক কর’-এর কথা বললেও, বাস্তবে এতগুলি হার পরোক্ষ করটির মূল উদ্দেশ্য মাটি করেছে। এ বার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বার্তায় স্পষ্ট, তাঁরা ধীরে ধীরে জিএসটি সরলিকরণের দিকেই এগোচ্ছেন। যে পথে রাজস্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে ১২ ও ১৮ শতাংশ করের ধাপ দু’টি মিশে একটি হওয়ার সম্ভাবনা। সেই সঙ্গে সিমেন্ট ও গাড়ির যন্ত্রাংশে কর কমানোর পদক্ষেপও।

Advertisement

এখন কিছু পণ্যে জিএসটি শূন্য। বাকি চারটি ধাপ ৫%, ১২%, ১৮%, ২৮%। সোনা ও হিরের ক্ষেত্রে হার আলাদা। জেটলি না বললেও সূত্রের ইঙ্গিত, ১২ ও ১৮ শতাংশের ধাপ দু’টি মিশে কর হতে পারে ১৫%। যা শুনে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির কটাক্ষ, ‘‘সরকারের হঠাৎ কী হল যে, তিন রাজ্যের ভোটে হারতেই ২৮% থেকে কয়েকটির কর কমিয়ে ১৮% করল। এখন ১৮% থেকে কমিয়ে ১৫% করার কথা বলছে!’’

জিএসটির একাধিক হার নিয়ে তোপ দাগার প্রশ্নে অবশ্য সিঙ্ঘভির দাবি, ‘‘আমরা তো বলিনি একটাই হার থাকবে। করের মূল একটি হার থাকা উচিত। প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির কর হওয়া উচিত তার কম। আর ক্ষতিকারক সামগ্রীগুলির তার বেশি।’’

Advertisement

ভবিষ্যৎ রূপরেখা

• রাজস্ব আরও বাড়লেই জিএসটির ১২ ও ১৮ শতাংশের ধাপ দু’টিকে মিশিয়ে মাঝামাঝি একটি হার চালু।

• সিমেন্ট ও গাড়ির যন্ত্রাংশকে ২৮% থেকে বের করে আনা। সর্বোচ্চ করের আওতায় শুধু বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্যগুলিকেই রাখা।

• করের কম হার, করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, বেশি আদায়, বাণিজ্যের জন্য পথ সহজ, কর মূল্যায়নে ন্যূনতম হস্তক্ষেপ ও করের হার কমানোর কাজের বড় অংশ সারা। এর হাত ধরে বৃদ্ধির হারও বাড়বে।

• যে সব রাজ্য ১৪% রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি, তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সেস মেটানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, জিএসটি-র দ্বিতীয় বছরে সেই ক্ষতিপূরণের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমবে।

• যারা ৩১% পরোক্ষ কর বসিয়ে শোষণ চালিয়েছে এবং ক্রমাগত জিএসটিকে খাটো করছে, তাদের মন দিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত। দায়িত্বহীন রাজনীতি ও দায়িত্বহীন অর্থনীতি শুধু নীচের দিকে নিয়ে যায়।

এ দিন ফেসবুকে ‘এইটিন মন্থস অব জিএসটি’ শীর্ষক এক পোস্টে জেটলি অবশ্য শুধু করের ধাপ কমানোর ইঙ্গিতই দেননি। তোপ দেগেছেন ইউপিএ জমানায় করের হার ৩১% ছিল বলেও। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ২৮ শতাংশের সর্বোচ্চ হার থেকে বিলাসবহুল ও ক্ষতিকর পণ্য বাদে বাকিগুলিকে বার করে এনে দ্রুত প্রথম দফায় কর কমানোর কাজ শেষ করবেন তাঁরা। বস্তুত এখনও সিমেন্ট, গাড়ির যন্ত্রাংশে কর ২৮%। সম্প্রতি জিএসটি পরিষদের বৈঠকে কর কমানোর তালিকায় যেগুলি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছিল শিল্প।

তবে একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রের তড়িঘড়ি এই ঘোষণা মূলত ভোটে চোখ রেখেই। তাদের প্রশ্ন, কর কমলে যে রাজস্ব হারাবে রাজ্য ও কেন্দ্র, তা পূরণ হবে কী করে? সূত্রের দাবি, এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল গত জিএসটি পরিষদের বৈঠকেও। জেটলি অবশ্য জানান, সম্প্রতি ২৩টি পণ্যে কর কমানোর সিদ্ধান্ত পরিষদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেওয়া। কিন্তু সূত্র বলছে, বৈঠকে অনেকেই এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। কারণ কর আদায় এখনও লক্ষ্য ছোঁয়নি। যদিও জেটলির দাবি, জিএসটির প্রথম বছরে মাসে গড় আদায় ছিল ৮৯,৭০০ কোটি। যা এ বার বেড়ে ৯৭,১০০ কোটি ছুঁয়েছে। তাঁর আশা, রাজ্যগুলিকে দ্বিতীয় বছরে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে অনেক কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement