অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
কোষাগারে টাকা না-থাকায় রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানো সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবারই জিএসটি পরিষদের বৈঠকে যুক্তি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বদলে ধার করে ক্ষতি মেটাতে রাজ্যগুলিকে দু’টি বিকল্প প্রস্তাব দেয় কেন্দ্র। শনিবার তারই বিস্তারিত নিয়ম প্রকাশ করল মোদী সরকার। সেই সঙ্গে রাজ্যগুলিকে লেখা চিঠিতে প্রস্তাবের পক্ষে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, সকলের সুবিধার্থে যেখানে রাজ্যের ঋণ নিলেই চলে যায়, সেখানে কেন্দ্রের সেই পথেই না-হাঁটাই ভাল। সেই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের অর্থ জোগাতে পাঁচ বছরের পরেও সেস বসানোর পথও খোলা রেখেছে মোদী সরকার। যাতে চাপ বাড়তে পারে সাধারণ মানুষ ও শিল্পের উপরেই। ১ সেপ্টেম্বর এই প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্যগুলির প্রশ্নের জবাব দেবেন অর্থসচিব অজয় ভূষণ পাণ্ডে।
হিসেব বলছে, জিএসটি চালুর কারণে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যগুলির আয় কমবে ৯৭,০০০ কোটি টাকা। আর ২.০৩ লক্ষ কোটি কমবে করোনার জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির জন্য। সেস তহবিলে যে অর্থ রয়েছে, তা থেকে ৬৫,০০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে কেন্দ্র। তার পরেও বাকি থাকবে ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা।
মোদী সরকারের প্রথম প্রস্তাব, ওই ৯৭,০০০ কোটি ধার করুক রাজ্য। যার সুদ মেটানো হবে সেস তহবিল থেকে। কেন্দ্র চেষ্টা করবে সুদের হার ভারত সরকারি ঋণপত্রের ইল্ডের সমান বা তার কাছাকাছি রাখতে। তার বেশি হলে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে কেন্দ্র। অথবা দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুসারে, ওই ২.৩৫ লক্ষ কোটি শর্তসাপেক্ষে ধার নিক রাজ্যগুলি। যার সুদ রাজ্যগুলিকে দিতে হবে নিজেদের তহবিল থেকে। আর আসল কাটা হবে সেস তহবিল থেকে। কোনও ক্ষেত্রেই ওই ৯৭,০০০ কোটি টাকা রাজ্যের ঋণ হিসেবে ধরা হবে না।
মন্ত্রকের যুক্তি, কেন্দ্র অতিরিক্ত ধার নিলে সরকারি ঋণপত্রের ইল্ডে (প্রকৃত আয়) প্রভাব পড়ে। তার উপরে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়েও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। কিন্তু রাজ্যগুলি ঋণ নিলে তেমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা কম। তাই যে ধার কেন্দ্রকে এড়িয়ে রাজ্যের মারফতই নেওয়া সম্ভব, সেখানে সেই পথেই এগোনো উচিত। আর সেই জন্য কেন্দ্র, রাজ্য, অর্থনীতি ও বেসরকারি ক্ষেত্র-সহ সকলের কথা ভেবেই রাজ্যগুলির সায় দেওয়া উচিত।
যদিও এই প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর দাবি, যে পদ্ধতিতেই ঋণ নেওয়া হোক না কেন, আদতে সমস্যার মুখে পড়বে রাজ্যগুলিই।
কেন্দ্রের যুক্তি
• কেন্দ্র বেশি ধার করলে সরকারি বন্ডের ইল্ড ছাড়াও, অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
• সেই তুলনায় রাজ্যগুলি ধার করলে তা এড়ানো যায়।
• তাই অর্থনীতি, বেসরকারি ক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন কথা মাথায় রেখেই রাজ্যগুলির উচিত এই পথে হাঁটা।
• রাজ্যের ঋণে সুদ বেশি ঠিকই। কিন্তু সে জন্য যাতে তাদের ভুগতে না-হয়, সেই কথা মাথায় রাখা হবে।
রাজ্য, বিরোধীদের তোপ
• এপ্রিল-জুলাইয়ে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্য ১.৫ লক্ষ কোটি। কেন্দ্রের কাছে টাকা না-থাকলে ধার করে তা মেটানো হোক।
• প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের যুক্তি, প্রথম প্রস্তাবে ভবিষ্যতে সেস বাবদ প্রাপ্যের পুরোটাই যাবে সুদ মেটাতে। সমস্যায় পড়বে রাজ্যগুলি।
• দ্বিতীয় প্রস্তাব এর আগের রাজ্যগুলির ঋণের পথ সহজ করারই নামান্তর।