ছবি: সংগৃহীত।
কাজ গিয়েছে চুরি।
অর্থনীতির চাকা বসে যাওয়ার জেরে দেশে কাজের বাজারের বিবর্ণ, ছবি ফের উঠে এল উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্টে। শুক্রবার প্রকাশিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, অক্টোবরে ভারতে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৮.৫%। সেপ্টেম্বরের ৭.২ শতাংশের তুলনায় তা বেশি তো বটেই, ২০১৬ সালের অগস্টের পরেও এই হার সর্বোচ্চ।
গত লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার (এনএসএসও) ফাঁস হওয়া রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, নোটবন্দির ঠিক পরে ২০১৭ সালে বেকারত্বের হার সাড়ে চার দশকে সর্বোচ্চ (৬.১%)। কিন্তু তখন তা মানতে চায়নি কেন্দ্র। কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশের পরে তাতে শেষমেশ উঠে এসেছিল ওই হারই। পরেও দেশে কাজের অভাবের কথা এখনও পর্যন্ত সরাসরি কবুল করতে চায়নি মোদী সরকার। কিন্তু কাজের বাজারের হাল যে সত্যিই খারাপ, তা বার বার ফুটে উঠছে বিভিন্ন সমীক্ষায়।
বেহাল অর্থনীতি
• অক্টোবরে বেকারত্বের হার ৮.৫ শতাংশ।
• সেপ্টেম্বরে বেকারত্বের হার ছিল ৭.২ শতাংশ।
• নোটবন্দির পরে, ২০১৭ সালে বেকারত্বের হার ছিল
৬.১ শতাংশ।
• অক্টোবরে, উৎসবের মরসুমে জিএসটি আদায় ৫.২৯ শতাংশ কম।
বিরোধী এবং বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের অভিযোগ, কাজ না-থাকা অবশ্যই চিন্তার। কিন্তু তার থেকেও বেশি উদ্বেগজনক হল, সেই সমস্যার কথা স্বীকারই করতে চাইছে না কেন্দ্র। দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অর্থনীতির সার্বিক ছবিও। কারণ, তা থেকে অন্তত অদূর ভবিষ্যতে সঙ্কটমুক্তির আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
যেমন, অক্টোবরে রেকর্ড বেকারত্বের এই ছবি সামনে এসেছে। অথচ তখন উৎসবের ভরা মরসুম। ওই একই মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.২৯% কমেছে জিএসটি আদায়ও। অর্থাৎ, যখন বিক্রিবাটা তুঙ্গে থাকার কথা, তখনও জিএসটি আদায়ে লক্ষ্য ছোঁয়া যাচ্ছে না।
সাধারণত চাহিদা চাঙ্গা হলে, নতুন করে টাকা ঢালতে আগ্রহী হন লগ্নিকারীরা। নিযুক্ত হন নতুন কর্মী। পুরনোদেরও বেতন বাড়ে। তাঁদের হাতে আসা টাকায় চাহিদা আরও বাড়ে। গতি ফেরে বৃদ্ধির চাকায়। কিন্তু হালফিলের কোনও পরিসংখ্যানেই এই আশার দেখা এখনও মেলেনি।
শেষ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের তলানিতে। চলতি অর্থবর্ষের জন্য তার পূর্বাভাস অনেকখানি ছাঁটাই করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদন সরাসরি কমেছে ৫.২%। অগস্টে সরাসরি ১.১% কমেছে শিল্পোৎপাদনও। এ দিন উপদেষ্টা সংস্থা আইএইচএস মার্কিটের সমীক্ষায় আবার ফুটে উঠেছে যে, অক্টোবরে কল-কারখানায় উৎপাদন নেমে এসেছে দু’বছরের মধ্যে সব থেকে নীচে। ভাল নয় ‘অচ্ছে দিন’ ফেরার আশায় আগামী দিনের জন্য দিয়ে রাখা বরাতের ছবিও। গাড়ি শিল্পের হাল তথৈবচ। চাহিদায় ভাটা আবাসন-সহ প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই। ‘একমাত্র সান্ত্বনা’ শেয়ার বাজারের রেকর্ড দৌড়। যার সঙ্গে আবার অর্থনীতির রূঢ় বাস্তবের পুরোপুরি যোগ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
অর্থনীতির এই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থার মাসুল গুনেই বাড়ছে বেকারত্ব। নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর, শুধু বেহাল গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। অবস্থা আরও অনেক বেশি সঙ্গিন অসংগঠিত ক্ষেত্রে। সেখানে নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর জেরে বন্ধ হয়েছে বহু ব্যবসার ঝাঁপ। কাজ গিয়েছে বহু মানুষের। যাঁরা কাজ পাচ্ছেন, তাঁদেরও অনেককে যোগ দিতে হচ্ছে যোগ্যতার তুলনায় অনেক কম বেতন এবং নিজেকে কম প্রয়োগ করতে পারার কাজে। যার প্রমাণ কয়েকশো করণিক পদের জন্য লক্ষাধিক আবেদন। যার মধ্যে রয়েছেন বহু স্নাতকোত্তর, ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ, পিএইচডি-ও।
সরকার সমস্যার কথা সরাসরি মানতে না-চাইলেও, এ দিন কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের একটি অনুষ্ঠানে সংস্থার প্রশংসা করতে গিয়ে ঘুরপথে তা কিছুটা মেনেছেন কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব হীরালাল সামারিয়া। তাঁর দাবি, অর্থনীতি যেখানে মন্দার মুখে, অনেক সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ, তখন নির্ভরতা জুগিয়ে ভাল সুদ দিচ্ছে ইপিএফ।
অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ার কথা বলছে কংগ্রেসও। কিন্তু মোদীর মন্ত্রীরা তা মানবেন কি?