প্রতীকী ছবি।
ধনতেরসে তেমন রোশনাই দেখা যায়নি সোনার গয়নার দোকানে। বিশেষ করে মার খেয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় একমাত্র ভরসা আসন্ন বিয়ের মরসুম। গয়না শিল্পের কারবারিদের আশা, সোনার দাম একটু কমলেই বিপণিমুখো হবেন ক্রেতারা। আর তার হাত ধরে বাড়বে ব্যবসা। কিন্তু সেই আশায় জল ঢালতে পারে পাকা সোনার চড়া দর। সমীক্ষা বলছে, এই বছর তো তা চড়া থাকবেই। ২০২০ সালে দাম আরও বাড়তে পারে। বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, এই অবস্থা চললে গয়না সংস্থাগুলির কাঁচামাল জোগানের খরচ বাড়বে। তার জেরে গয়না তৈরির বরাত কমলে কাজ হারাতে পারেন কারিগরেরা।
এক দিকে বিশ্ব জুড়ে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ। ফলে অস্থির বিভিন্ন শেয়ার বাজার। আর অন্য দিকে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ-সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কই কমিয়ে চলেছে সুদের হার। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে সোনায় বিনিয়োগের উপরেই আস্থা রাখছেন লগ্নিকারীরা। আর এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে সোনার দর। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের নতুন সমীক্ষা বলছে, আগামী দিনে সেই দর চড়তে পারে আরও। ২০১৯ সালে সোনার গড় দাম দাঁড়াতে পারে (২৪ ক্যারাটের প্রতি আউন্স) ১,৪০২ ডলার। আর আগামী বছরে ঠেকবে ১,৫৩৭ ডলারে।
সোনার দাম বাড়ায় লগ্নিকারীরা খুশি হলেও, তাতে চিন্তার রেখা ফুটেছে গয়না শিল্পের কপালে। কারণ, সব দেশেই সোনার দর মূলত নির্ভর করে বিশ্ব বাজারে ধাতুটির দামের উপরে। লগ্নিকারীরা মূলত পাকা সোনায় (বার, কয়েন ইত্যাদি) টাকা ঢালেন ঠিকই। কিন্তু সেগুলির দাম বাড়ার জের পড়ে গয়নার সোনার উপরেও। দেখা যায়, কোনও দেশে চাহিদা না-থাকলেও বিশ্ব বাজারে যদি সোনার দাম বাড়ে, তা হলে সেই দেশে বাড়ে তার দাম। সেই চড়া দর আবার ঝিমিয়ে থাকা চাহিদাকে টেনে তুলতে দেয় না।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, চলতি বছরের শেষেই ভারতে ২৪ ক্যারেট সোনার প্রতি ১০ গ্রামের দাম ৪২,০০০ টাকায় ঠেকতে পারে। এই পূর্বাভাসই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বর্ণ শিল্পের। গয়না ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, সোনার দাম ইতিমধ্যেই গত বছরের থেকে অনেকটা বেড়েছে। তার উপরে মানুষের হাতে থাকা বাড়তি নগদে টান পড়ায় অনেকেই সোনা কেনার পথে হাঁটছেন না। ফলে কমছে গয়নার চাহিদা। এই পরিস্থিতিতে সোনার দাম বাড়তে থাকলে যা তলানিতে ঠেকবে। ফলে এমনিতেই ধাক্কা খাওয়া এই শিল্পের সমস্যা আরও বাড়বে।
অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর সেন বলেন, ‘‘এমনিতেই আর্থিক হাল খারাপ হওয়ায় গয়নার বাজারের হালও খারাপ। সোনার দাম ইতিমধ্যেই অনেকটা বেড়েছে। কমেছে তার চাহিদা। তার উপর দাম আরও বাড়লে গয়না শিল্প বড় সমস্যার মুখে পড়বে।’’ একই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গয়নার কারিগরেরাও। অখিল ভারতীয় স্বর্ণকার সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলেন, ‘‘গয়নার কাটতি কমলে কাজ হারাবেন কারিগরেরা।’’ এই পরিস্থিতিতে তাই আগামী কয়েক মাসের দিকে তাকিয়ে স্বর্ণ শিল্প।