কলকাতায় মাত্র এক দিনে ১৬০০ টাকা লাফিয়ে শনিবার এই প্রথম ৬০,০০০ টাকা পেরিয়েছে। প্রতীকী ছবি।
সারি সারি খুপড়ি যে ঘরগুলি প্রদীপের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে থাকে প্রতি দিন, সেখানে আচমকাই নেমেছে নিঝুম অন্ধকার। বন্ধ হাঁকডাক। ব্যবসার ন্যূনতম ব্যস্ততাটুকুও উধাও। কলকাতার বৌবাজার এলাকায় বেশিরভাগ গয়নার কারিগরদের হাতে কাজ নেই।
চড়া সুদের ধাক্কায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কার জেরেই বিশ্ব বাজারে ছুটছে সোনা। যার ঢেউ আছড়ে পড়ছে ভারতেও। পাকা সোনার (১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট) দাম কলকাতায় মাত্র এক দিনে ১৬০০ টাকা লাফিয়ে শনিবার এই প্রথম ৬০,০০০ টাকা পেরিয়েছে। সপ্তাহ তিনেকে বৃদ্ধি প্রায় ৪০০০। পৌঁছেছে ৬০,৪৫০ টাকায়। জিএসটি ধরলে ৬২,০০০ পার। আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক দাম যে গতিতে বাড়ছে তাতে দেশে তার আরও উপরে ওঠা অসম্ভব নয়। গয়নার সোনাও (১০ গ্রাম ২২ ক্যারাট) প্রথম বার ৫৭,৩৫০ টাকা ছুঁয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্ব অর্থনীতি সমস্যায় পড়লেই সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে দামকে ঠেলে তোলে। কোভিডের সময় থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, নানা সময় দাম নজির গড়েছে এই কারণেই।
আশঙ্কায় উত্থান
• চড়া সুদের কারণে আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক ও সিগনেচার ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হওয়া এবং ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাঙ্কের আর্থিক সমস্যা গোটা বিশ্বকে ব্যাঙ্কিং শিল্পের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় ফেলেছে। ফলে নড়বড়ে শেয়ার বাজার। কমা ডলার।
• সুরক্ষিত লগ্নির খোঁজে বিশ্ব বাজারে দ্রুত বেড়েছে সোনার চাহিদা। দাম আউন্স পিছু ২০০০ ডলারের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
• আশঙ্কা, কয়েক দিনের মধ্যে হলুদ ধাতু ২০০০, ২৫০০ ডলারও ছাড়াতে পারে।
• বিশ্ব বাজারে সোনার দাম বাড়লে ভারতেও তা চড়ে।
• বিশেষজ্ঞদের মতে, আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগামী ২১ মার্চ তাদের ঋণনীতি বৈঠকে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ না করলে বিশ্ব বাজারে আরও দামি হতে পারে সোনা। সেটা হলে, তার প্রভাব পড়বে দেশেও।
ফলে মাথায় হাত ক্রেতা-বিক্রেতার। ব্যবসায়ীদের দাবি, ফের কিছু ছোট দোকানে তালা ঝোলার অবস্থা হয়েছে। কিছুটা বিক্রিবাটা হচ্ছে বড়-মাঝারিগুলিতে। কিন্তু বহু কারিগরের হাতে গয়না তৈরির বরাত নেই। সংসার চালাতে অনেকে অন্য কাজ খুঁজছেন। বেলঘরিয়ার ডিপি নগরের ছোট গয়নার ব্যবসায়ী অনুকূল চন্দ্র সরকার বলেন, “বিক্রি পুরো বন্ধ। বৌনিই হচ্ছে না। ব্যবসা চালাব কী করে?’’ বনগাঁর ব্যবসায়ী বিনয় সিংহের আক্ষেপ, ‘‘দু’দিন আগে ক্রেতাকে বলা দাম কয়েক হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে।’’ তাঁর বিপণিতে গয়না কিনতে আসা সুমিত্রা সুকুল বলেন, “আচমকা খরচ এতটা বাড়বে ভাবতে পারিনি। দাম আরও বাড়ার ভয়ে কিনছি।’’
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে জানান, “দাম আরও বৃদ্ধির আতঙ্কে কিছু বিক্রিবাটা হচ্ছে ঠিকই। তবে তা বড়-মাঝারি দোকানে।’’ করুণ অবস্থা কারিগরদের, দাবি বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পি সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার এবং সংগঠনের বৌবাজার শাখার সম্পাদক সুব্রত করের। জানাচ্ছেন, অনেকের হাতে কাজ নেই। মাছ বিক্রি বা দিনমজুরের কাজ করছেন একাংশ। বৌবাজারের কারিগর বলাই রায়ের খেদ, “প্রদীপের আগুনে আমরা গয়না বানাই। কিন্তু প্রায় কোনও ঘরেই প্রদীপ জ্বলছে না।’’