প্রতীকী চিত্র
বাজেটে শুল্ক কমানো এবং বাজারে দাম কমা, এই দুইয়ের জেরে মার্চে ভারতে সোনার চাহিদার পালে গতি ফিরেছে অনেকটাই। এক দিকে যেমন বিক্রি বাড়বে ধরে নিয়ে সোনা ব্যবসায়ীরা তা বেশি করে আমদানি করছেন, তেমনই ক্রেতারাও রেকর্ড অঙ্ক থেকে দাম বেশ খানিকটা কমায় সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গয়না কিনছেন। যার হাত ধরে গত অর্থবর্ষের (২০২০-২১) শেষ মাসে দেশে হলুদ ধাতুটির আমদানি বেড়েছে ৪৭১%।
সরকারি সূত্রের খবর, গত মাসে সোনা আমদানি হয়েছে রেকর্ড ১৬০ টন। টাকার নিরিখে তা ২০২০ সালের মার্চের ১২৩ কোটি ডলারের (প্রায় ৮৯৭৯ কোটি টাকা) থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৪০ কোটি ডলার (প্রায় ৬১,৩২০ কোটি টাকা)। জানুয়ারি-মার্চে আমদানি হয়েছে ৩২১ টন। গত বছরের এই সময়ে হয়েছিল ১২৪ টন।
গত বছর করোনার মধ্যে সুরক্ষিত লগ্নির গন্তব্য হিসেবে চাহিদা বেড়েছিল সোনার। যার জেরে অগস্টে এক সময়ে বিশ্ব বাজারে তার দাম পৌঁছয় আউন্সে রেকর্ড ২০৭২ ডলারে। ভারতে তা ৬০,০০০ টাকার (জিএসটি-সহ) কাছে পৌঁছে নতুন নজির গড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ক্রেতাই নতুন করে গয়না কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন। সমস্যায় পড়েছিলেন সোনা ব্যবসায়ীরাও। যে কারণে চোরা আমদানি রুখতে বার বার শুল্ক কমানোর আর্জি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।
শেষ পর্যন্ত বাজেটে সোনায় আমদানি শুল্ক ১২.৮৮% (সারচার্জ-সহ) থেকে কমিয়ে ১০.৭৫% করেছে কেন্দ্র। তার উপরে করোনা প্রতিষেধক চালু হওয়ায় অর্থনীতিতে গতি আসবে বলে ধারণা। ফলে সোনার দামও নেমেছে। শুক্রবার কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দর ছিল ৪৬,০০০ টাকা (কর বাদে)। আর ১০ গ্রাম গয়নার সোনার (২২ ক্যারাট) ৪৩,৬৫০ টাকা। শিল্প মহলের মতে, দাম এতটা নামায় ক্রেতারাও ফিরতে শুরু করেছেন। যার হাত ধরে চাহিদা বৃদ্ধি আমদানি বাড়াতে সাহায্য করেছে।
স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে বলেন, ‘‘করোনার আগের সময়ের চাহিদার প্রায় ৭০% ফিরেছে। গত এক-দু’সপ্তাহে ক্রেতারাও খোঁজ নিচ্ছেন। অনেকে বরাত দিচ্ছেন। এপ্রিলেও ভাল বিক্রি হবে বলে আশা।’’ একই মত জেজে গোল্ড হাউসের হর্ষদ অজমেঢ়ারও। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে গয়না কেনা থেকে হাত গুটিয়ে ছিলেন। দাম কমতেই তাঁরা বাজারে ফিরছেন।’’
তবে ইতিমধ্যেই শুক্রবারে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ফের ৮১,০০০ ছাড়িয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে যদি ফের লকডাউন বা কড়াকড়ি হয়, তা হলে নববর্ষ বা বিয়ের মরসুমে চাহিদা আবার মার খেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন শিল্পমহলের একাংশ। আপাতত তাই পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এগোনোর কথা বলছেন তাঁরা।