প্রতীকী ছবি
দেশের উৎপাদন শিল্প সঙ্কোচনের কবলে থাকতে চলেছে টানা চার মাস। আইএইচএস মার্কিট ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় জুলাইয়েও কল-কারখানার উৎপাদন কমার ইঙ্গিত পেতেই মোটামুটি স্পষ্ট এই ছবিটা। করোনার আবহে যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু যে কারণে দেশ জুড়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে তা হল, এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় কল-কারখানার উৎপাদন জুনে সামান্য বাড়ার আভাস মিলেছিল। ফলে আশা ছিল জুলাইয়ে তা আর একটু বাড়বে। আর এ ভাবেই ধীরে ধীরে কাটতে থাকবে মেঘ। তাতে যতই সময় লাগুক না কেন। অথচ এ দিন সমীক্ষাটি জানাচ্ছে, জুলাইয়ে পিএমআই সূচকে জুনের তুলনায় বেশি সঙ্কোচনের ছায়া। জ্বালানির বিক্রিতেও একই ছবি। জুনের তুলনায় চোখে পড়ার মতো কম। যা কারখানার কর্মকাণ্ড আরও কমারই ইঙ্গিত।
পিএমআই সূচক ৫০-এর উপরে থাকার অর্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৃদ্ধি। ৫০-এর নীচে মানে সঙ্কোচন। টানা ৩২ মাস বৃদ্ধির ঘরে থেকে মার্চে ওই সূচক ছিল ৫১.৮। সেই মাসেই ভারত-সহ সারা বিশ্বে ধাক্কা দেয় করোনা। সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন শুরু হতেই স্তব্ধ হয় অর্থনীতির কর্মকাণ্ড। ফলে এপ্রিলে সূচক মুখ থুবড়ে পড়ে (২৭.৪)। পরের দু’মাস সঙ্কোচনের ঘরে থাকলেও, তাতে ঘুরে দাঁড়ানো ইঙ্গিত ছিল (৩০.৮ এবং ৪৭.২)। অথচ জুলাইয়ে ফের উৎপাদন শিল্পে ক্ষত গভীর হওয়ার আভাস।
সমীক্ষকদের ব্যাখ্যা, জুন থেকে লকডাউন শিথিল হয়ে শিল্পের কর্মকাণ্ড শুরু হলেও, সংক্রমণ বাড়ায় সংস্থাগুলি পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না। বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিক্ষিপ্ত লকডাউন। ফলে কমছে কাঁচামালের চাহিদা, বরাতও। সংক্রমণের তেজ কত দিনে কমবে কেউ নিশ্চিত না-হওয়ায় বরাত কমেছে বিদেশ থেকেও। কমছে রফতানি। কিছু রাজ্যের বন্যাও ধাক্কা দিয়েছে উৎপাদনে। বলা হয়েছে, সংক্রমণ কিছুটা না-কমলে ও লকডাউন আরও শিথিল না-হলে গতি ফেরা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, শিল্পে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ স্পষ্ট। কিন্তু একাধিক সমীক্ষায় স্পষ্ট, বাস্তব ছবিটা তাঁর সেই দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
কারণ
• সংক্রমণ বৃদ্ধি।
• নতুন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত লকডাউন।
• বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা।
• এখনও চাহিদার মাথা না-তোলা।
• দেশে ও বিদেশে সংস্থাগুলির বরাত ফের কমে যাওয়া।
প্রতিফলন তেলে
• জুলাইয়ে ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৪৮.৫ লক্ষ টন। জুনের তুলনায় ১৩% কম। ২১% কম এক বছর আগের তুলনায়।
• পেট্রলের বিক্রি ২০.৩ লক্ষ টন। জুনের থেকে ১% কম। আগের বছরের চেয়ে ১১.৫%।
• এ ভাবে ফের জুলাইয়ে জ্বালানির বিক্রি কমা শিল্প ক্ষেত্রের কর্মকাণ্ড আবার কমে যাওয়ারই ইঙ্গিত ।
আইওসি সূত্রের দাবি, মে-জুনে দেশে তেলের ব্যবহার এপ্রিলের তুলনায় বাড়লেও, জুলাইয়ে তা ফের ধাক্কা খেয়েছে। যা কল-কারখানায় উৎপাদন কমারই প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, শিল্পের পরামর্শ সত্ত্বেও চাহিদা বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে না কেন্দ্র। অথচ চাহিদা না-ফিরলে উৎপাদনে গতি আসা কঠিন।