প্রতীকী ছবি।
অতিমারির মধ্যেই বিশ্বের প্রায় অর্ধেক অংশে চোখ রাঙাচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার সঙ্কট। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তো ভুগছেই, এর জের পড়ছে চিন-সহ অন্যান্য দেশের উপরেও। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে বিদ্যুতের খরচ মাত্রা ছাড়াচ্ছে, বন্ধ করতে হচ্ছে কারখানা। ধাক্কা খাচ্ছে উৎপাদন। স্পেন, ইটালির মতো দেশে ইতিমধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অনেকটা। বিভিন্ন সংবাদ ও সমাজ মাধ্যম সূত্রের খবর, চিনে শিল্প-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ট্রাফিকের আলো নিভেছে, আবাসনগুলিতে লিফ্ট কাজ করছে না, বন্ধ হয়েছে থ্রিজি মোবাইল সংযোগও। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি দ্রুত আয়ত্ত্বে না-এলে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। চড়বে মূল্যবৃদ্ধি, বাড়বে আমদানি, যাতায়াতের খরচ। চিনে কল-কারখানা বন্ধ হলে তার জের পড়তে পারে ইস্পাত, চিপ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যা অন্যান্য দেশে শিল্পোৎপাদনে সমস্যা তৈরি করবে।
করোনার মধ্যে গত বছর বেশির ভাগটা জুড়েই সারা বিশ্বে বন্ধ ছিল আর্থিক কর্মকাণ্ড। একই অবস্থা হয়েছে গ্যাস ও কয়লা ক্ষেত্রে। দাম তলানিতে নামায় রাশ টানা হয় অশোধিত তেল উৎপাদনেও। এ বছর যখন অতিমারির ঢেউ কাটিয়ে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ছন্দে ফিরছে, তখনও সে ভাবে দ্রুত উত্তোলন বাড়াতে পারেনি এই সব ক্ষেত্র। তার উপরে চিনের মতো বিভিন্ন দেশ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে জোর দিতে গিয়েও রাশ টেনেছে কয়লার মতো খনিজ জ্বালানিতে। ফলে সব মিলিয়ে জ্বালানির চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য ধাক্কা খেয়েছে। তার উপরে আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলিতে শুরু হবে শীতকাল। যখন জ্বালানির চাহিদা বাড়ে। বর্তমান সঙ্কটে তা বাড়তি ইন্ধন জোগাবে বলে আশঙ্কা।
উপদেষ্টা সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্সের দাবি, এই বিদ্যুৎ সঙ্কটের কারণে চিনের ৪৪% আর্থিক কর্মকাণ্ড ধাক্কা খাবে। চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও ৮.২% থেকে কমিয়ে ৭.৮% করেছে তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য মত, বিভিন্ন দেশ শীতের কথা ভেবে বিদ্যুৎ বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারে রাশ টানছে ঠিকই। কিন্তু জোগান সমস্যা মিটে দাম না-কমলে শুধু এই কড়াকড়িতে কতটা লাভ হবে সন্দেহ। বরং এখন সব দেশই নিজেদের জন্য আগে সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইবে। যারা তা পারবে না, তাদের অর্থনীতি ফের স্তব্ধ হতে পারে বলেও আশঙ্কা। যে কারণে আপাতত কোনও ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় দিন গুনছে সকলে।